“রাজাকার” নিয়ে বিতর্ক নয়—প্রধানমন্ত্রীর কথার বিকৃতি করে ছাত্রদের বিপথগামী করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে
গতকাল, ১৪ জুলাই, হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন:
“মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা যদি কোটা না পায়, তাহলে রাজাকারদের সন্তানরা পাবে?”
এটি ছিল একটি নীতিগত প্রশ্ন—জাতির মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেওয়া একটি বক্তব্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, একটি ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী এই বক্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত করে ছাত্রদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কাউকে ‘রাজাকার’ বলেননি—তিনি তুলনা টানেছেন দেশপ্রেম বনাম দেশবিরোধিতার ভিত্তিতে
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আসল বক্তব্যটি খুব সহজ:
-
১৯৭১ সালে যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের সুযোগ না থাকলে,
-
যাঁরা দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, তাঁদের উত্তরসূরি সুযোগ পাবে—এটা কি ন্যায্য?
তিনি স্পষ্ট করে কাউকে “রাজাকার” বলেননি।
তিনি ছাত্রদের অসম্মান করেননি—বরং ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে একটি রাষ্ট্রনৈতিক প্রশ্ন তুলেছেন।
যাঁরা নিজেদের মুখে ‘রাজাকার’ বলে ঘোষণা দিচ্ছেন, প্রশ্ন করা দরকার—তাঁরা কি নিজেরাই নিজেদের পরিচয় তুলে ধরছেন না?
গতকালের পর থেকে আন্দোলনের স্লোগান গুলোর দিকে যদি তাকাই:
-
“চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার!”
-
“তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার!”
-
“এক, দুই, তিন, চার, আমরা হলাম রাজাকার!”
প্রশ্ন হচ্ছে—প্রধানমন্ত্রী যেখানে কাউকে রাজাকার বলেননি, সেখানে ছাত্ররা কেন নিজেদের মুখে রাজাকারের পরিচয় বহন করছে?
এটা কি আত্মসমালোচনার বিপরীতে আত্মস্বীকৃতি?
নাকি জামায়াত-শিবিরের কৌশলে ছাত্রদের মুখে এই ‘স্লোগান ঢুকিয়ে’ দিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা সাইকোলজিকাল প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন:
“ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ। আমরা তাঁদের দাবি শুনি, বুঝি, এবং সমাধানের পথ খুলি। কিন্তু কেউ যদি তাদের বিভ্রান্ত করে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে টেনে নিতে চায়—তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
সরকার ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে, এবং এখন বিষয়টি বিচারাধীন।
সুতরাং, হাইকোর্টের রায় কার্যকর না, এবং সরকার বিষয়টি সমাধানে প্রস্তুত।
১৫ জুলাই ২০২৪—একটি দিন, যেদিন রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তি প্রধানমন্ত্রীর একটি ইতিহাসনির্ভর বক্তব্যকে বিকৃত করে ছাত্রদের হাতে “রাজাকার” শব্দ তুলে দিয়েছে।
এটি আন্দোলন নয়, এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরুদ্ধে একটি নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
আন্দোলনের অধিকার থাকতেই পারে, কিন্তু বিকৃত তথ্য ও অপমানজনক স্লোগানে নিজের পরিচয় মুছে ফেলা কখনোই ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ হতে পারে না।