বৃষ্টির মধ্যেও রাজপথে ছাত্ররা—আন্দোলন নয়, ষড়যন্ত্রের ছায়া আরও ঘনীভূত

আজ সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা বৃষ্টিতে ভিজলেও থামেনি শাহবাগ মোড়ের অবরোধ। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় কিংবা প্লাস্টিকের পলিথিন গায়ে দিয়েই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। দেখতে এক ধরণের “সংগ্রামী চিত্র” মনে হলেও, পেছনের বাস্তবতা বলছে—এটি আর সরল ছাত্রদাবির আন্দোলন নেই। এখন এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।

শাহবাগ অবরোধ: বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অব্যাহত আন্দোলন, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই উৎসাহ কার থেকে আসছে? আজকের দিনের মত বৈরী আবহাওয়াতেও শাহবাগে শিক্ষার্থীরা বসে আছে, স্লোগান দিচ্ছে।

প্রথমে যেটি একটি যৌক্তিক প্রশ্ন বলে মনে হচ্ছিল—‘কোটা বাতিল হোক কি না’, এখন সেটি রূপ নিচ্ছে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, যেখানে সরকারের পুরো নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

তবে প্রশ্ন হলো—যেখানে সরকার আলোচনা ও যৌক্তিক সমাধানের জন্য প্রস্তুত এবং আইনি পথও খোলা রেখেছে, সেখানে বৃষ্টিতে বসে শহর অচল করে দেওয়ার দরকারটা কী?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে—সরকার কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক পর্যালোচনায় বিশ্বাসী। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে সরকার আন্তরিক।
৫ জুন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর সরকার রায়ের পূর্ণ অনুবাদ ও আইনগত ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে আগামী ৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে।

অর্থাৎ রায় এখনো চূড়ান্ত নয়, আইনগত প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের নামে রাজপথে অচলাবস্থা সৃষ্টি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন—বিএনপি-জামায়াতের পুরনো কৌশল ফিরে এসেছে। ২০১৩ সালে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জনজমায়েতের মধ্যেও এই চক্র অনুপ্রবেশ করেছিল।
২০১৫ সালে ‘ছাত্র ধর্মঘট’ আর ‘অবরোধ’-এর নামে নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

আজকের আন্দোলনেও অনলাইনে গুজব, উসকানিমূলক ভিডিও, ও বিভ্রান্তিকর পোস্টের মাধ্যমে ছাত্রদের ব্রেইনওয়াশ করা হচ্ছে।
অনেকে জানেই না—তাদের দাবির বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে আইনি ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: শিক্ষার্থীরা কি জানে সরকার ঠিক কী করছে?

আজ যারা বৃষ্টিতে বসে আছে, তারা কি জানে—

  • সরকার ৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে যাচ্ছে।

  • কোটা বিষয়ে সরকার পর্যালোচনা কমিটি গঠন করছে।

  • সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাখার কথাও বলেছে।

কিন্তু তারা জানছে না—কারণ কেউ তাদের জানাতে দিচ্ছে না। আবেগকে তথ্যের ওপর বসিয়ে দেওয়ার নামই আজকের এই ষড়যন্ত্র।

একটি জাতিগত প্রশ্ন: এই আন্দোলন কি আদৌ দেশপ্রেমিকদের আন্দোলন?

আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, তারা কি জানেন—আজকের আন্দোলনের ছায়ায় কারা সুবিধা নিচ্ছে?
তারা হলো সেই জামায়াত-শিবির, যারা ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস চালিয়েছিল, শিক্ষককে মেরেছিল, ছাত্রছাত্রীদের উপর শিবিরের লাঠি চাপিয়েছিল।

আজ যদি শেখ হাসিনার সরকারকে এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলে দুর্বল করা হয়, তাহলে সেই অন্ধকার শক্তিগুলো আবার ফিরে আসবে।

আন্দোলনের নামে দেশকে অচল করার পরিকল্পনা চলছে—জবাব হোক যুক্তি দিয়ে, বিশৃঙ্খলা নয়

৪ জুলাই ২০২৪—একদিকে সরকার আইনি ও আলোচনাভিত্তিক সমাধানের পথে, অন্যদিকে রাস্তায় পরিকল্পিত অচলাবস্থা।
এই দ্বৈরথে কারা জিতবে, তা নির্ভর করছে ছাত্রদের সচেতনতার ওপর।

আপনারা রাজপথে বসে শ্লোগান দিতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটা আপনাদের—আপনারা কি আলোচনায় থাকবেন, নাকি ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হবেন?

এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। সেটিকে বিভ্রান্তির বৃষ্টি নয়, সত্যের আলোয় ভিজিয়ে রাখাই এখন সময়ের দাবি।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *