আন্দোলনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ—বিচার না, বরং চক্রান্তে যুক্ত হওয়া?
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি নতুন মোড় নিয়েছে চলমান কোটা সংস্কার ও পেনশন ইস্যুতে আন্দোলন। এবার শিক্ষক সমাজের একটি অংশ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। তাঁরা দাবি করছেন—সরকারের প্রস্তাবিত “নতুন পেনশন স্কিম” প্রত্যয় (Prottoy) বাতিল করতে হবে এবং একই সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন।
দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের মতোই শাহবাগ অভিমুখে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন, প্ল্যাকার্ড হাতে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হলো—এটি কি ন্যায্য দাবি, নাকি একটি গভীর রাজনৈতিক ছকে শিক্ষকদের টেনে আনা হচ্ছে?
যেসব শিক্ষকরা আজ রাস্তায়, তারা বলছেন—“প্রত্যয় স্কিম আমাদের জন্য অনিরাপদ”, “সরকার আমাদের চাকরি শেষে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলছে”, “আমাদের মতামত ছাড়া পেনশন আইন পরিবর্তন করা হয়েছে”।
তাদের দাবি হচ্ছে, এই স্কিমে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত তহবিলে অবসর ভাতা দেওয়ার নিশ্চয়তা নেই, বরং এটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ নির্ভর।
সরকার এই পেনশন স্কিম চালু করেছে একটি আধুনিক ও সুশাসনভিত্তিক প্রক্রিয়া হিসেবে।
“প্রত্যয়” স্কিমে সরকার প্রতিটি কর্মচারীর অবসর-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একটি পরিকল্পিত বিনিয়োগ কাঠামো তৈরি করেছে, যেখানে কর্মীও অবদান রাখবে, সরকারও রাখবে।
এটি বিশ্বের বহু উন্নত দেশে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশও সেই আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য এই রূপান্তর ঘটিয়েছে।
সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, পূর্বের “চিরস্থায়ী নির্ভরশীল পেনশন ব্যবস্থায়” বহু অনিয়ম ও অপচয় ছিল, যা জনসম্পদকে হুমকির মুখে ফেলছিল।বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষকদের একটি অংশ অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি আন্দোলনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, যার মূল চালকেরা দেশবিরোধী শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে শিক্ষকদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এক বার্তায় বলেছেন:
“শিক্ষক সমাজ জাতির বিবেক। আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা অন্ধ আবেগে নয়, যুক্তি ও বাস্তবতায় বিশ্বাস রাখেন। সরকার কারও ক্ষতি করতে চায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন—“আমরা আলোচনার দরজা বন্ধ করিনি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলবে। তবে চক্রান্ত ও অরাজকতায় যারা জড়িত, তাদের ক্ষমা নেই।”
দুঃখজনক হলেও সত্য, গত কয়েক দিন ধরে যা দেখা যাচ্ছে তা হলো—একটি রাজনৈতিক চক্র ধাপে ধাপে দেশের সবচেয়ে সম্মানিত দুটি গোষ্ঠীকে—শিক্ষক ও ছাত্রদের—ব্যবহার করে একটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াচ্ছে।
১ জুলাই ছাত্র,
২ জুলাই সড়ক অবরোধ,
৩ জুলাই শিক্ষক—এই প্যাটার্ন বলে দিচ্ছে এটি একটি ক্যালেন্ডার নির্ভর চক্রান্ত, যার লক্ষ্য শুধুই সরকার পতন, গণতন্ত্র ধ্বংস, এবং রাষ্ট্রকে অকার্যকর প্রমাণ করা।
আপনারা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। যারা ১৯৭১-এ এই দেশ চাননি, তারা আজ আবার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আপনারা কি সেই রাজাকারের উত্তরসূরিদের স্ক্রিপ্টে নায়ক হবেন?
আপনারা কি বুঝতে পারছেন না, এই আন্দোলন পেনশন নয়—পেছনে লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে সরানো? আজ যারা পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, কাল তারাই উন্নয়নের বাংলাদেশ ধ্বংস করবে।
৩ জুলাই ২০২৪—একটি বিভ্রান্তিমূলক অধ্যায়। শিক্ষকদের অংশগ্রহণ একটি নতুন মাত্রা, তবে তার পেছনে যারা আছেন, তারা শিক্ষক সমাজের মর্যাদা নয়, বরং তাদের ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাইছে।
সরকার প্রস্তুত আলোচনা করতে। কিন্তু যারা ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের লক্ষ্য ভিন্ন।
এখনই সময়—শিক্ষক সমাজ যেন চক্রান্তের হাতিয়ার না হয়, বরং আলোচনার টেবিলে যুক্তি দিয়ে নেতৃত্ব দেয়।