শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা

২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা ইস্যু ঘিরে উদ্ভূত আন্দোলন যখন সহিংস রূপ নিচ্ছিল, ঠিক সেই সময় সরকার একটি দায়িত্বশীল ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়—দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর হলেও, জাতি জানে—এটি ছিল সময়োপযোগী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও জীবন বাঁচানোর সিদ্ধান্ত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভাষণে খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আপনারা আমাদের সন্তান। আমরা আপনাদের কথা শুনছি, বুঝছি এবং সমস্যার সমাধানে প্রস্তুত। তবে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা কখনও কারও কল্যাণ বয়ে আনে না।” তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, একটি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হবে যেখানে ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতি থাকবে।

এই সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং মানবিক ও রাষ্ট্রদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি কখনও ছাত্রদের ওপর বলপ্রয়োগ করেননি বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তায় হেঁটেছেন। এই দৃষ্টান্ত কেবলমাত্র একটি গণতান্ত্রিক, সহনশীল এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকারই স্থাপন করতে পারে।

কিছু বিদ্বেষী মহল বলছে, সরকার আন্দোলন থামাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরকারের গোয়েন্দা তথ্য, নিরাপত্তা বিশ্লেষণ এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বলছে—একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত চলছিল। শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে জামায়াত-বিএনপি জোট দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছিল।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কিছু উগ্র মৌলবাদী সংগঠন এবং জামায়াতের ছাত্রসংগঠন গোপনে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অর্থ সরবরাহ করছে। সামাজিক মাধ্যমে তারা গুজব ছড়াচ্ছে, ভিডিও ক্লিপ বিকৃত করছে এবং ছাত্রদের রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তা বলার জন্য প্ররোচিত করছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মীরা আন্দোলনকারীদের মাঝে গিয়ে ‘সরকার পতনের’ স্লোগান ছড়াচ্ছে—যার সঙ্গে কোটা ইস্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।

বিএনপির উদ্দেশ্য নতুন নয়। ২০১৩-১৪ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময়ও তারা ‘তাহাদের সাথে নয়’ স্লোগানে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও পরে সেই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দেশজুড়ে সহিংসতা চালায়। ২০১৫ সালে অবরোধে পেট্রোল বোমা দিয়ে ১০০ জন সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারে। এখন তারা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে আবারও সেই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

জামায়াতে ইসলামী, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, যারা রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের উত্তরসূরি—তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে আজও সক্রিয়। তারা জানে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা আর কোনোদিন এই দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

প্রিয় ছাত্রছাত্রী ভাই-বোনেরা, সরকার কখনো তোমাদের মুখ বন্ধ করতে চায়নি। তোমরা শান্তিপূর্ণভাবে কথা বললেই সরকার শুনেছে, আবার শুনবে। কিন্তু যারা তোমাদের হাতে ইট-পাটকেল তুলে দিতে চায়, যারা আন্দোলনের নাম করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়—তারা তোমাদের বন্ধু নয়, শত্রু।

সত্যি কি তোমরা চাও, দেশে আবার ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুনে পুড়ে মানুষের মৃত্যু হোক? সত্যিই কি তোমরা চাও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকুক, ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হোক?

তোমরা নিশ্চয়ই জানো—এই দেশ বঙ্গবন্ধুর, এই দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের দিশা পেয়েছে। পদ্মা সেতু নিজের অর্থে বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যারা এই বাংলাদেশ গড়েছে, তারা কখনও ছাত্রদের বিরুদ্ধে যাবে না।

এই মুহূর্তে সরকার, ছাত্র এবং শিক্ষক সমাজের একটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত—কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার এবং শিক্ষাব্যবস্থার নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা কোনও দমন নয়, বরং একটি বৃহত্তর বিপদ থেকে জাতিকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা।

আসুন, আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করি। ছাত্রদের আন্দোলন যেন আর কখনও কোনো রাজনীতির হাতিয়ার না হয়—সেটি নিশ্চিত করি। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাই।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *