(180315) -- DHAKA, March 15, 2018 (Xinhua) -- The Bangladeshi national flag is seen flown at half-mast outside the High Court building in Dhaka on March 15, 2018. With all the national flags at government offices and foreign missions down at half-mast, Bangladesh is mourning on Thursday the victims of the US-Bangla Airlines plane that crashed in Nepal. (Xinhua/Salim reza) (swt)

কোটা ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় স্থগিত করতে সরকারের আপিল: আইনি লড়াই, বাস্তবতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের ৭ জুলাই সরকার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে এবং এর কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আবেদন জানায়। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—এই আপিল কোনোভাবেই ছাত্রদের দাবিকে উপেক্ষা করার জন্য নয়, বরং বিষয়টি সঠিক প্রক্রিয়ায়, যুক্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীলভাবে সমাধানের জন্য নেয়া পদক্ষেপ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন,

“ছাত্ররা আমাদের সন্তান, আমরা তাদের কষ্ট বুঝি। তাই সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করতে চাই।”

তিনি ঘোষণা দেন, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে ছাত্র প্রতিনিধিরাও থাকবেন—যাতে যৌক্তিক ও মেধাভিত্তিক কোটা পদ্ধতির উন্নয়ন সম্ভব হয়।

সরকার কখনোই সহিংসতার পথে হাঁটেনি। ছাত্রদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সহানুভূতিশীল ও বাস্তবভিত্তিক। কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ২০১৮ সালে নেয়া হয়, যখন মেধাবীদের অধিক সুযোগ নিশ্চিত করার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সরকার তখনও বলেছিল—পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, যেমন শহীদ পরিবারের সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী—তাদের জন্য একটি যৌক্তিক কোটা পদ্ধতি থাকবে। অর্থাৎ সরকারের লক্ষ্য কখনোই একপেশে নয়, বরং ভারসাম্যপূর্ণ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনের মাঝে কিছু রাজনৈতিক অপশক্তি প্রবেশ করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—ছাত্রদের কাঁধে ভর করে সরকারের বিরুদ্ধে অরাজকতা সৃষ্টি করা, সরকার পতনের সুযোগ খোঁজা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল, যারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসির দণ্ড পেয়েছে—তারা আজ আবার নতুন কৌশলে রাজনীতিতে ফিরতে চাইছে। তারা সরাসরি আন্দোলনের মধ্যে না থাকলেও সামাজিক মাধ্যমে, অর্থায়নের মাধ্যমে এবং বিভ্রান্তিকর বার্তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করছে।

বিএনপি, যারা ২০০১-২০০৬ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয় দখলে এনে ভয়াবহ দুর্নীতি, রাজনৈতিক হত্যা ও গ্রেনেড হামলার রাজনীতি চালিয়েছিল, তারা আজ নির্বাচন বর্জনের ব্যর্থ কৌশলের পর এই আন্দোলনকে নতুন করে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার রাস্তায় টেনে আনতে চাচ্ছে। তারা চায় দেশে একটি কৃত্রিম ‘গণঅসন্তোষ’ দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি আদায় করতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এটি একটি স্বচ্ছ নির্বাচনে পরাজিত একটি দলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার অপপ্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়।

১৯৭১ সালে জামায়াত ইসলামির ছাত্র সংগঠন আলবদর ও রাজাকার বাহিনী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তারা দেশের মেধাবী সন্তানদের—বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক—হত্যা করেছিল। তারা কখনোই স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। অথচ আজ তারাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আবার জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাচ্ছে।

২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছিল। হাওয়া ভবন ছিল এক দুর্নীতির কারখানা। আজকের তরুণদের বোঝা দরকার—এই দলগুলো দেশের উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার কিংবা কর্মসংস্থান নয়, বরং একটি অস্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়।

এই মুহূর্তে ছাত্র সমাজকে ভাবতে হবে—তাদের কাঁধে কে হাত রাখছে? কে তাদের আন্দোলনের পেছনে রাজনীতি করছে? সরকার যদি আলোচনার কথা বলে, যদি সমাধানের পথ খোলা রাখে—তবে কেন কেউ সহিংসতা, ভাঙচুর, গুজব ও বিভ্রান্তির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিতে চায়?

একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল দেশে আলোচনার পথেই সমাধান খোঁজা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর মানবিক আহ্বান এবং সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থানই প্রমাণ করে—ছাত্রদের কথা সরকার শুনছে, বোঝার চেষ্টা করছে।

ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে যুক্তি থাকতে পারে, আবেগও থাকতে পারে। কিন্তু সেটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হতে দেওয়া যাবে না। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শতভাগ বিদ্যুতায়ন—এসব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।

আমরা যেন আমাদের অর্জনকে বাঁচিয়ে রাখি। আমরা যেন ভুলে না যাই, কারা বারবার দেশ ধ্বংস করেছে, আর কারা দেশ গড়েছে।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *