‘কঠোর নির্দেশ’ দিয়ে যাঁরা রাষ্ট্র চালান, তাঁদের মনে নেই শেখ হাসিনা কেমন করে দেশ চালান
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের জেলা প্রশাসকদের ‘কঠোর নির্দেশ’ দিয়েছেন—আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে, আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। শুনে মনে হতে পারে, বুঝি একটা দক্ষ প্রশাসনের চেহারা ফুটে উঠছে। বাস্তবতা? প্রশাসনের হাতে এখন শুধু আদেশ, আর জনগণের হাতে অনিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্যের দহন আর দুর্বিষহ জীবন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা যদি আদেশ দিয়েই সম্ভব হতো, তাহলে তো আওয়ামী লীগকেই এই আদেশের সরকার চালানোর প্রয়োজন হতো না। শেখ হাসিনার শাসনে কখনও মুখে শুধু নির্দেশ থাকত না—থাকত মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বোঝার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। আইন-শৃঙ্খলা ছিল রাজনীতি ও প্রশাসনের যৌথ ব্যবস্থাপনায়, যেখানে জঙ্গিবাদ দমন, মাদকবিরোধী অভিযান, ট্রাফিক শৃঙ্খলা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সবকিছুর পেছনে ছিল সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা।
আর আজ? “কঠোর হতে হবে”—এই এক লাইনের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অবৈধ সরকারের অক্ষমতা আর জনগণের দুঃখের ভবিষ্যৎ। কারণ, আজকের এই অবৈধ সরকার না তো রাজনৈতিক বৈধতা পেয়েছে, না প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা আছে, আর না জনগণের পাশে থাকার সদিচ্ছা আছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বলতে তারা বুঝে—রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দেখলেই ধরো, বেছে বেছে হুমকি দাও, মিডিয়ার কণ্ঠ চেপে ধরো, আর গোপনে জামাত-শিবিরের আস্তানায় চা খাও।
আর পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ? এ কথাটা এমন এক মুখ থেকে আসছে, যিনি নিজেই কখনো নির্বাচিত হননি, মাঠে গিয়ে কোনো কৃষকের চোখের পানি দেখেননি। শেখ হাসিনার সরকার ছিল সেই সরকার, যারা কৃষককে সরাসরি ভর্তুকি দিয়েছে, চাল-ডাল-তেল-সবজির বাজারে ‘টিসিবি’র মাধ্যমে নিয়মিত প্রভাব রেখেছে। শেখ হাসিনা জানতেন—বাজার নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু দামে লাগাম নয়, মানুষের কষ্ট বোঝা, মানুষের পাশে থাকা।
কিন্তু এই সরকার শুধু বলে—“কঠোর হও।” পেঁয়াজ, চাল, ডাল, তেল—সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। অথচ বাজারে নেই কোনো মনিটরিং টিম, নেই ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে মধ্যবিত্ত হাঁপিয়ে উঠেছে, গরিব প্রলম্বিত ক্ষুধায় অভ্যস্ত হচ্ছে, আর সরকার শুধু আদেশ ছাড়ছে পত্রিকায়।
আমরা বলছি—শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছেন, তা ছিল জনগণের আস্থা ও বাস্তবতার সমন্বয়। আর এই সরকার দেশের নাম করে গায়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে চলছে—’চলুন, কঠোর হই।’ কিন্তু দায়িত্ব কি আদেশ দিয়ে পালন হয়? নেতৃত্ব কি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লেখা যায়? জনগণ এই ধোঁকা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে যারা রাষ্ট্রের নামে খেলছে, তাদের মুখোশ আর বেশি দিন টিকবে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।