তথ্য সুরক্ষার নামে নজরদারি, আর অর্থনীতিতে ধ্বংস—আবারও স্পষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের অযোগ্যতা ও প্রতিহিংসা
আজ ২২ জানুয়ারি ২০২৫। অন্তর্বর্তী সরকার “ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫”-এর একটি খসড়া প্রকাশ করেছে, যেটিকে তারা বলছে “ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার রক্ষার আধুনিক সংস্করণ”। কিন্তু এই খসড়ার ভেতর লুকিয়ে আছে নজরদারি, দমননীতি, এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পুরোনো ছক। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যেসব ধারা নিয়ে নিরপেক্ষ বিতর্ক চলছিল, সেই বিতর্কিত ধারাগুলোর কোনোটা বাদ না দিয়ে, উল্টো কিছু ক্ষেত্রে আরও কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু করেছিল একটি দরকারি প্রেক্ষাপটে—জঙ্গিবাদ, সাইবার অপরাধ, এবং রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার ঠেকাতে। কিন্তু সেই আইন নিয়ে যখন সমালোচনা হয়েছে, শেখ হাসিনা তখনই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা সংশোধনের। একাধিক ধারার বাস্তব প্রয়োগ ও নিরপেক্ষ ব্যাখ্যার জন্য আইনি সংস্কার চলছিল। কারণ, শেখ হাসিনার জন্য জনগণের বাকস্বাধীনতা ছিল দমন নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার একটি শক্ত ভিত্তি।
কিন্তু আজকের অন্তর্বর্তী সরকার এই অধ্যাদেশের নামে পুরোটাই করতেছে ভিন্ন উদ্দেশ্যে—তারা এ আইনকে ব্যবহার করতে চায় ভিন্নমত দমন, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার হাতিয়ার হিসেবে। “তথ্য সুরক্ষা”র নামে এখন গোয়েন্দা নজরদারির বৈধতা তৈরি হচ্ছে। মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ, এমনকি মোবাইল ফোন পর্যন্ত নজরদারির আওতায় আনতে চাইছে তারা। শেখ হাসিনার সময় যেখানে “সাইবার নীতিমালা” তৈরি করা হচ্ছিল সহযোগিতার ভিত্তিতে, সেখানে আজ গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ভয়ভীতির রাষ্ট্রব্যবস্থা।
অন্যদিকে, অর্থনীতির চিত্র আরও উদ্বেগজনক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধেই ১,০০০ বিলিয়ন টাকা ব্যয় হয়েছে—যা জাতীয় বাজেটের এক-ষষ্ঠাংশ। দেশ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। অথচ এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় এক দিনে আসেনি—এটি শুরু হয়েছে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দৃঢ় অর্থনীতিকে হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ‘পরীক্ষামূলক শাসন’ চালু করেছে।
শেখ হাসিনার সময়েই বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেল—সবগুলোই দেশীয় ও বহিঃবিনিয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল। বৈদেশিক রিজার্ভ একসময় ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন দেশ ঋণ নয়, অবকাঠামোতে বিনিয়োগে ব্যস্ত ছিল।
কিন্তু আজ সেই অবস্থা নেই। কারণ একটি অবৈধ সরকার ক্ষমতায় এসে দায়িত্বশীলতার বদলে চাটুকারদের দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। তারা অর্থনীতি চালাচ্ছে ‘দিনযাপন বাজেট’-এর মতো। আর এখন সংকটের দায় চাপানো হচ্ছে পুরনো সরকারের ঘাড়ে—যে সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও বলিষ্ঠ করে রেখে গেছে।
আমরা বলছি—এই তথাকথিত তথ্য সুরক্ষা আইন আর অর্থনৈতিক ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের আসল মুখোশ খুলে দিয়েছে। তারা ইতিহাস মুছে, শোষণ ও দমন চালিয়ে এক ভয়ংকর রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করছে। শেখ হাসিনার মত নেতৃত্ব আজ না থাকলে, এই দুর্যোগ আরও গভীর হবে। জনগণ তা বুঝে গেছে—আর তাই সময় এসেছে সত্যের পথে, শক্তির পথে আবারও ফিরে যাওয়ার।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।