প্রধানমন্ত্রীর শান্তির আহ্বান: “আলোচনা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়”
২০২৪ সালের ৫ জুলাই জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ছিল এক মানবিক, যুক্তিপূর্ণ ও সাহসিকতায় পরিপূর্ণ বার্তা—যেখানে তিনি চলমান কোটা সংস্কার ইস্যুতে ছাত্র সমাজকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তার এই বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং একজন রাষ্ট্রনায়ক, একজন মা এবং একজন অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জাতিকে বোঝানোর চেষ্টা। তিনি বলেন, “আপনারা আমাদের সন্তান। আমরা কখনোই চাই না, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু সহিংসতা বা রাজনৈতিক প্ররোচনায় পা দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।”
শেখ হাসিনা যে যুক্তি তুলে ধরেছেন—তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবতানির্ভর। তিনি মনে করিয়ে দেন, বাংলাদেশে এখনও এমন বহু মানুষ আছেন, যারা সীমাহীন দারিদ্র্য, পিছিয়ে থাকা অঞ্চল, অথবা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তারা প্রাকৃতিক বা সামাজিকভাবে বঞ্চনার শিকার। এমন একজন শিক্ষার্থী, যার পরিবারে বিদ্যুৎ নেই, ঠিকমতো তিনবেলা খাবার নেই, তার পক্ষে শহরের ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীর সঙ্গে সমান প্রতিযোগিতা করা কি সম্ভব?
প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বাস্তব একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন—“আমি চাই না একজন মেধাবী শিক্ষার্থী কোটার কারণে বঞ্চিত হোক। কিন্তু এটাও চাই না, একজন শহীদ পরিবার বা পিছিয়ে পড়া এলাকার শিক্ষার্থী সম্পূর্ণভাবে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যাক।” এখানেই তার বক্তব্যের ভারসাম্য ও ন্যায়বোধ স্পষ্ট।
তিনি কোনো দলীয় অবস্থান থেকে নয়, বরং একটি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বশীলতা থেকেই বলেন, “সরকার একটি কমিটি গঠন করবে, যেখানে ছাত্র প্রতিনিধি, শিক্ষক, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা থাকবেন। তারা যৌক্তিকভাবে পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে।” এটি একটি কার্যকরী ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র পরিচালনার প্রমাণ—যেখানে সমস্যা এলে তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে খোঁজা হয়, সংঘাতের মাধ্যমে নয়।
আজ যখন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের দিকে যাচ্ছে, তখন আমরা কি চাইবো আমাদের তরুণরা ভাঙচুর, আগুন বা অরাজকতার মধ্যে নিজেদের জীবন বিপন্ন করুক? শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্ট, “ক্লাস বর্জন, রাস্তা অবরোধ, অথবা সহিংসতা কখনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। বরং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার, শিক্ষাব্যবস্থা এবং দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতুর মতো মহা-প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন, শতভাগ বিদ্যুৎ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, গ্রামের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট—এসব একদিনে আসেনি। একটি স্থিতিশীল, কার্যকর নেতৃত্বের ফলেই এগুলো সম্ভব হয়েছে। তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন, তিনি হঠকারিতায় নন, ধৈর্য, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে নেন।
আজ দেশের ছাত্র সমাজ, অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের ভাবতে হবে—এই আন্দোলনকে কারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে? কারা শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিচ্ছে? আমরা চাইবো, ছাত্ররা তাদের দাবি তুলে ধরুক, তবে সেটি হোক শান্তিপূর্ণভাবে, যুক্তির মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শান্তি, আলোচনার এবং ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন—তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও যুক্তিসম্মত পথ। এখন আমাদের দায়িত্ব সেই পথেই হাঁটা।