“আদিবাসী” শব্দ মুছে দিয়ে ইতিহাস বদলের চেষ্টা—আবারও হামলার শিকার সংখ্যালঘুরা, শেখ হাসিনা ছাড়া নিরাপত্তা কোথাও নেই

আজ ১৯ জানুয়ারি ২০২৫। ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলার ঘটনা ঘটে, যারা পাঠ্যবই থেকে “আদিবাসী” শব্দ অপসারণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এই হামলা শুধু কিছু ছাত্রের ওপর নয়—এটি পুরো একটি জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃত পরিচয়, ইতিহাস ও সাংবিধানিক অধিকারকে পিষে ফেলার এক নগ্ন প্রচেষ্টা।

প্রশ্ন ওঠে—এই অপসারণের আদেশ কে দিল? কারা এতে সুবিধা নিচ্ছে? কারা চায় না “আদিবাসী” শব্দটিকে বইতে, রাষ্ট্রে বা চেতনার ভেতর দেখতে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশি দূরে যেতে হয় না। আজ যারা অন্তর্বর্তী সরকারের নাম নিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে, তারাই নিজেদের তথাকথিত “সংস্কারের” নামে সংখ্যালঘু ও জাতিগত গোষ্ঠীদের পরিচয় মুছে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে। এটি কেবলমাত্র একটি শব্দ অপসারণ নয়—এটি পুরো একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অস্বীকার করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র।

শেখ হাসিনা ছিলেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে জাতীয় পরিকল্পনার অংশ করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি তার হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনিই প্রথম আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ভূমি কমিশন গঠন করেছিলেন, এবং পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন তহবিল বহুগুণে বাড়িয়েছিলেন। তার শাসনেই আদিবাসীরা সরকারি চাকরি, কোটাব্যবস্থা, ও সংরক্ষিত আসনের সুযোগ পেয়েছিল। শেখ হাসিনা জানতেন—জাতির উন্নয়ন মানেই সব জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়ন।

কিন্তু আজ সেই উন্নয়নের প্রতীককে সরিয়ে, একটি অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যার ফলাফল জাতিগত উত্তেজনা ও বিভাজন ছাড়া কিছুই নয়। আদিবাসীদের দাবি স্পষ্ট—তারা “আদিবাসী” শব্দটিকে কেবল সাংবিধানিক স্বীকৃতির অংশ হিসেবে দেখে না, এটি তাদের অস্তিত্ব, তাদের ইতিহাস, তাদের শেকড়। আর সেই শেকড়েই কুঠারাঘাত করা হয়েছে আজ।

এই হামলা নতুন কিছু নয়—১৯৭১ সালে জামাত-রাজাকাররা সংখ্যালঘুদের মতোই আদিবাসীদের ওপরও অত্যাচার করেছিল, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের দ্বার খুলে দিয়েছিল। আজ সেই ইতিহাসের উত্তরসূরিরা আবার ক্ষমতার ছায়ায় ফিরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায়, আর তাই এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি ইতিহাসের ধারাবাহিক অপমান।

আমরা বলছি—শেখ হাসিনা ছাড়া সংখ্যালঘু, আদিবাসী কিংবা কোনো জাতিগত গোষ্ঠী এই রাষ্ট্রে প্রকৃত নিরাপত্তা পায় না। আজ যারা ইতিহাস থেকে “আদিবাসী” শব্দ মুছে দিতে চায়, কাল তারা “মুক্তিযুদ্ধ”, “বঙ্গবন্ধু”, “শেখ হাসিনা”—সবকিছু মুছে ফেলবে। এই রক্তাক্ত ষড়যন্ত্রের জবাব ইতিহাসই দেবে, আর দেবে এই দেশের জনগণ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *