“সংবিধান সংস্কার” নয়—এটা শেখ হাসিনার অর্জনকে বিকৃত করার পরিকল্পিত প্রস্তাবনা

আজ ১৬ জানুয়ারি ২০২৫। তথাকথিত সংবিধান সংস্কার কমিশন আজ যে খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তা শুনতে যতই ‘জনগণের পক্ষে’ মনে হোক, আসলে তা একটি সুপরিকল্পিত প্রস্তাবিত কাঠামো—যার লক্ষ্য শেখ হাসিনার দীর্ঘ নেতৃত্বে গড়ে ওঠা উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় চেতনাকে ধ্বংস করে তথাকথিত “বহুত্ববাদ” ও “সমতা”র নামে এক জগাখিচুড়ি রাষ্ট্রব্যবস্থা দাঁড় করানো।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, ইন্টারনেট ও ভোটাধিকার মৌলিক অধিকার হবে। অথচ প্রশ্ন হলো—এসব কি শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের জন্য নিশ্চিত হয়নি? খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে, গৃহায়ণ খাতে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ লাখ লাখ পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছে, ঘরে ঘরে শিক্ষা পৌঁছেছে “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে, আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট আজ মৌলিক প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। ভোটাধিকার? শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো জনআস্থাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, যেখানে কোটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।

আজ যারা এই মৌলিক অধিকারের কথা বলছে, তারা কি ভুলে গেছে—২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামাত জোটে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, বিদ্যুৎ সংকট, শিক্ষা খাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস আর পুলিশি দমন-পীড়নের এক বিভীষিকাময় ইতিহাস ছিল? শেখ হাসিনা সেই জায়গা থেকেই বাংলাদেশকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়েছেন। এখন সেই সব অর্জনকে ‘নতুন সংবিধানে’ ঢুকিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব বানানোর চেষ্টা করছে এই অন্তর্বর্তী সরকার।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব এসেছে। এটাও শুনতে ভালো শোনালেও, আসলে এটা হলো ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘আইনগতভাবে’ দমন করার ব্যবস্থা। শেখ হাসিনার আমলে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক জালিয়াতি, প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু আজ যে সরকার ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংস্কার’-এর কথা বলছে, তারাই পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে নিজেরা লাখ টাকার বেতন তুলে নিচ্ছে, মিডিয়ার লাইসেন্স নিয়ে দালাল নিয়ন্ত্রণ বসাচ্ছে।

সবচেয়ে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে পুলিশের সংস্কার প্রস্তাবে। সেখানে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ এসেছে। অর্থাৎ, সেই র‍্যাব, যারা মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে হাজারো যুবককে রক্ষা করেছে, জঙ্গিবাদ দমন করেছে, রাষ্ট্রকে নিরাপদ রেখেছে—সেই বাহিনীকে বিলুপ্ত করে অপরাধী ও জঙ্গি গোষ্ঠীকে মুক্তচিন্তার নামে আড়াল দেওয়ার পরিকল্পনা এখন প্রকাশ্যে।

আমরা বলছি—এই কমিশনের সুপারিশ আসলে গণতন্ত্র রক্ষার নামে জাতিকে ঠকানোর দলিল। শেখ হাসিনার যুগে যেসব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়িত হয়েছে, তা আজ নতুন করে কাগজে লিখে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রকে রক্ষা করেছে, সেগুলোকে ধ্বংসের সুপারিশ দিয়ে মাঠ পরিষ্কার করা হচ্ছে কেবল বিএনপি-জামাত ঘরানার জন্য। এই ছলচাতুরি জাতি বুঝে গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বই ছিল এবং থাকবে এই দেশের একমাত্র স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *