“নির্বাচন দিন”—বিএনপির আহ্বান আসলে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার নতুন ছক
নতুন বছরের প্রথম দিনেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সরব হয়েছেন নির্বাচনের দাবিতে। তিনি বলেছেন, সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে যেন সরকার প্রভাব বিস্তার না করে। বাইরে থেকে শুনলে মনে হবে এ যেন এক চমৎকার গণতান্ত্রিক আহ্বান। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে—এটা কোনো গণতন্ত্রের ডাক নয়, এটা হলো বিএনপির সেই পুরনো দখলদারি রাজনীতির ফের মঞ্চ প্রস্তুতির কৌশল।
বিএনপি যখনই “নির্বাচনের” কথা বলে, তখন তারা ফাঁকা মাঠের আশা করে। যেখানে শেখ হাসিনা নেই, আওয়ামী লীগ নেই, নির্বাচন কমিশন নেই—থাকবে শুধু জামাত, শিবির, আর হাওয়া ভবনের প্রার্থীরা। তারা চায় এমন এক পাটাতন, যেখানে কোনোরকম বিরোধিতা নেই, সাংবাদিকদের প্রশ্ন নেই, আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না।
আজ সালাহউদ্দিন আহমেদ নির্বাচন ত্বরান্বিত করার কথা বলছেন, অথচ তারাই একসময় ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ পুড়িয়েছিল, বাসে আগুন দিয়েছিল, রেললাইন তুলে ফেলে গণপরিবহন ধ্বংস করেছিল। আজ যারা “নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ” চায়, তারাই একদিন ছাত্রদল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রক্তের রাজনীতি করেছে, ডাকসু, সেলসু—সবকিছুতে ভয় আর সন্ত্রাসের ছায়া ফেলেছে।
এই বিএনপি-ই একদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে, সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে টেন্ডার পর্যন্ত হাওয়া ভবনের নামে ‘চুক্তিভিত্তিক দখল’ চালু করেছিল। চাঁদাবাজি, ত্রাসের রাজত্ব, দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থার জন্ম—সবই তাদের অবদান। যারা একসময় মন্ত্রী-এমপিদের নাম ধরে চাঁদা তুলত, আজ তারা নির্বাচন চায়, যেন আবার সেই পুরনো চক্রে ফিরে যেতে পারে।
আর আজকের অন্তর্বর্তী সরকার এই খেলায় সহায়ক। তারা একে একে আওয়ামী লীগের মাঠ নিষ্ক্রিয় করেছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, শহীদ দিবসের ছুটি বাতিল করেছে, এখন সেই ফাঁকা মাঠটি বিএনপিকে উৎসর্গ করতে চাইছে। নির্বাচন ত্বরান্বিত করতে হলে তো আগে একটা রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকতে হয়—আজ যখন একদল সম্পূর্ণ দমন করা, আরেক দলকে প্রশাসনিক ও মিডিয়ার আশীর্বাদ দেওয়া হয়, তখন সেই নির্বাচনের ডাক আসলে ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা বলছি—ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া আর গণতন্ত্র এক নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া কোনো নির্বাচন এই দেশে গ্রহণযোগ্য নয়, আর বিএনপির মুখে গণতন্ত্র মানে অতীতের রক্তাক্ত ইতিহাসের নতুন সংস্করণ। জনগণ এখন সচেতন, ইতিহাস তাদের স্মৃতিতে জাগ্রত। এইবার মাঠে তারা শেখ হাসিনার পক্ষে নামবেই, যত চক্রান্তই হোক না কেন।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।