১৫তম সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার রায়—বিচারালয়ে বসেই ইতিহাস হত্যার চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র
আজ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪। হাইকোর্ট আজ এক যুগান্তকারী রায়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে। অর্থাৎ আবারও দেশে “অদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা” ফিরিয়ে আনা হয়েছে, এবং গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মুখে বলা হচ্ছে—গণতন্ত্রের পথে ফেরা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি হচ্ছে সেই পুরনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত ধাপ, যার লক্ষ্য একটাই—শেখ হাসিনাকে স্থায়ীভাবে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া, এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকে ইতিহাসের পাতায় নির্বাসিত করা।
১৫তম সংশোধনী শুধু কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল না, এটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, তত্ত্বাবধায়ক নামের এক পেছনের দরজার অভ্যুত্থানকে থামানো, আর গণতন্ত্রকে বারবার ষড়যন্ত্রের খপ্পর থেকে রক্ষা করার জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। শেখ হাসিনা এই সংশোধনীর মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন—ভোট জনগণ দেবে, সরকার গঠন করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আর নির্বাচন পরিচালনা করবে একটি সংবিধানসম্মত, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এটা গণতন্ত্রের সংজ্ঞা, আর বিএনপি-জামাতের জন্য ছিল এটি একটি প্রতিরোধ।
আজ হাইকোর্ট সেই আইন বাতিল করে কী করল? তারা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আবার তুলে দিলো সেই তৃতীয় পক্ষের হাতে—যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার মুখোশ পরে থাকা ব্যক্তি এসে বলবে কে ক্ষমতায় আসবে, কে নির্বাচন করবে, কে বাদ যাবে। এটা বিচার নয়, এটা হলো জামাত-বিএনপির পুরনো দাবির ওপর সিল মারার সাংবিধানিক কৌশল।
এই রায় কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি স্ট্র্যাটেজিক কৌশলের অংশ। তারা আগে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে রেখেছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে, এখন আইনের বই ঘেঁটে ‘বিচারালয়’কে বানিয়েছে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। উদ্দেশ্য একটাই—প্রতিহিংসার রাজনীতি।
জামাত-শিবির ও বিএনপি বহুদিন ধরেই চাচ্ছে এই রায়। তারা জানে—ভোটে শেখ হাসিনাকে হারানো সম্ভব নয়, তাই রায়ে তাকে সরাও। তারা জানে—গণভোটের নামে তারা আবার ধর্ম, ভারত-বিরোধিতা, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। এই রায় তাদের হাতে আরেকটি অস্ত্র তুলে দিলো।
আমরা বলছি—এই রায় ইতিহাসের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, আর জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার বিরুদ্ধে এক গণপ্রহসন। ১৫তম সংশোধনী বাতিল করা মানে স্বাধীনতা পরবর্তী সবচেয়ে সাহসী ও প্রয়োজনীয় আইনকে ধ্বংস করে দেওয়া। এই রায় বাংলাদেশের জন্য ন্যায়বিচার নয়—এটি আদালতের চেয়ারে বসা জামাত-বিএনপির আরেকটি মুখ। জাতি জানে, শেখ হাসিনা না থাকলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।