কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ: শান্তির আহ্বান ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জাতির উদ্দেশে এক আবেগঘন, বাস্তবতানির্ভর ও মানবিক ভাষণ দেন। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আমাদের সন্তান, আপনাদের কষ্ট, উদ্বেগ ও প্রত্যাশা আমরা বুঝি। কিন্তু তা প্রকাশের পথ হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক। জাতি চায় না, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব যারা দেবে—তারা সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার পথে হেঁটে সমাজকে অস্থিতিশীল করুক।” তিনি আরও বলেন, “দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি ক্লাসরুম ছেড়ে রাজপথে নেমে আসে, তাহলে কার ক্ষতি হবে? শিক্ষার্থীদেরই। দেশের উন্নয়ন তখন বাধাগ্রস্ত হবে, যার মূল্য সবাইকেই দিতে হবে।”

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা কখনোই চাই না, একজন যোগ্য ছাত্র কেবল কোটার কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত হোক। তাই আমরা ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে মেধা ও যোগ্যতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে তা করতে গিয়ে যেন যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলিত ও পিছিয়ে রয়েছে, তাদের অধিকার পুরোপুরি মুছে না যায়, সেটাও দেখতে হবে। কারণ কোটা শুধু পছন্দের বিষয় নয়, এটি অনেকের কাছে একটি বাঁচার শেষ অবলম্বন।”

প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে অত্যন্ত বাস্তব একটি প্রশ্ন রাখেন: “যদি একজন গরিব কৃষকের মেয়ে, যিনি শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, তার জন্য যদি সামান্য একটি সহায়তা না থাকে, তাহলে সে কীভাবে এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকবে?” তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে অনেক অন্ধকার গলি এখনো রয়ে গেছে। সেসব গলি থেকে আলোর পথে তুলে আনার দায়িত্ব সরকারের, কিন্তু তার জন্য সমাজের সহানুভূতিশীল মনোভাবও দরকার।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একটি মেয়ে, যিনি রংপুরের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে এসেছেন, তার বাবা একজন দিনমজুর। সে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছে। কিন্তু নগরাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের মতো তার কোচিং, গাইড, বা আধুনিক সুযোগ ছিল না। সে চাকরির পরীক্ষায় পাস করলো, কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় একটুখানি পিছিয়ে পড়লো। কোটা যদি না থাকে, তাহলে তার পুরো জীবনটাই ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। অথচ সেই সামান্য কোটা তার সামনে একটি সুযোগ খুলে দিতে পারে।”

শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমরা কোনো অবিচার করতে চাই না। আমরা চাই, সমাজে ভারসাম্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা হোক। সেই জন্যই আমরা নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছি। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক, সমাজবিদ—সকলের মতামত নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত, আধুনিক ও ন্যায্য কোটা পদ্ধতির সুপারিশ করা হবে।”

তিনি এও সতর্ক করেন, “আন্দোলনের নামে কেউ যদি ভাঙচুর করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে, কিংবা সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তবে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা গঠনমূলক আলোচনার পথে আসুক। আমাদের দরজা সবসময় খোলা।”

শেষে তিনি জাতির উদ্দেশে বলেন, “আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজ তোমরা দাবি তুলতে পারছো। এই স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব তোমাদেরই বেশি। তাই আহ্বান জানাই—আলোচনা করুন, দাবি জানান, কিন্তু দেশের স্বার্থ মাথায় রেখে শান্তির পথেই থাকুন। সরকার কখনোই জনগণের বিপক্ষে যায়নি, যাবেও না। যারা প্রকৃতভাবে বঞ্চিত, তাদের পাশে থাকাটাই মানবতা।”

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *