অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের অগ্রগতি প্রতিবেদন—মিথ্যার কাগজে ছাপানো এক ব্যর্থতার ডায়েরি
আজ ১৬ নভেম্বর ২০২৪। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কথিত “১০০ দিনের অগ্রগতি প্রতিবেদন” প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, এই সময়ে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে, এবং “দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পরিকল্পনা” নিয়েছে। কথাগুলো শুনে মনে হয় যেন দেশটা আজ শান্তি, সুশাসন আর সুবিচারের বেহেশতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা যখন জনগণ চোখে দেখছে, তখন এই রিপোর্ট আসলে কাগজে লেখা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।
প্রথমেই বলি—মূল্যস্ফীতি নাকি তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে? দেশের মানুষ জানে, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি—সবকিছুর দাম আগের চেয়ে বেশি। বাজারে গিয়ে কেউই এখন খালি হাতে না ফিরলেও, খালি পকেটেই ফিরছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, অথচ সেবা কমছে। ওষুধের দাম বেড়েছে, কিন্তু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। যদি এগুলো “নিয়ন্ত্রণ” হয়, তাহলে সেই নিয়ন্ত্রণ কাদের পকেটে যাচ্ছে?
আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা? এই ১০০ দিনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব তলব হয়েছে, ১৬৭ জনের প্রেস কার্ড বাতিল হয়েছে, হাইকোর্ট অবরোধ হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি উঠেছে—এই সবকিছুর মধ্যেই নাকি “স্থিতিশীলতা”? এটাই যদি স্থিতিশীলতা হয়, তাহলে অস্থিরতা কাকে বলে?
এবং সেই “দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার”—এটা তো আসলে একটি ভদ্র নাম, যার অর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার পরিকল্পনা। তারা ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করেছে, ৭ মার্চের ভাষণকে মূল্যহীন করেছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, এবং এখন গণভবনকে জাদুঘর বানানোর প্রকল্প নিয়েছে। এগুলো সংস্কার না—এসব হচ্ছে জাতির ইতিহাস মুছে দিয়ে জামাত-বিএনপি ঘরানার বিকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস।
এই সরকার একটিবারও বলে না, তারা কীভাবে ক্ষমতায় এসেছে। কোনো ভোটে নয়, কোনো গণরায়ে নয়—ছাত্র-আন্দোলনের নামে, বিচারপতিদের সঙ্গে আঁতাত করে, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে তারা আজ ক্ষমতার চূড়ায় বসেছে। আজ তাদের মুখে “অগ্রগতি” মানে হচ্ছে—তাদের ব্যর্থতা ঢাকার শব্দ।
এই ১০০ দিন শুধু ব্যর্থতা নয়—এটা ছিল একেকটি ধাপে ধাপে দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ইতিহাস ও সুশাসনকে গলা টিপে হত্যার প্রক্রিয়া। জনগণ চোখে দেখেছে, কিভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৈরি করা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে।
আমরা বলছি—এই রিপোর্ট ইতিহাসের চোখে ধোঁয়া, জাতির সঙ্গে তামাশা। জনগণ জানে, এই সরকার কতটা ব্যর্থ, কতটা প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারী, আর কতটা ষড়যন্ত্রনির্ভর। ১০০ দিনের মধ্যে যদি কিছু “অর্জন” হয়ে থাকে, তবে সেটি হচ্ছে: গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ, আওয়ামী লীগকে দমন, ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা। এই অর্জনকে জাতি কোনো দিন বৈধতা দেবে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।