১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস কার্ড বাতিল—স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে গণমাধ্যম দমনের সবচেয়ে সংগঠিত আঘাত
আজ ১২ নভেম্বর ২০২৪। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও স্বাধীন মত প্রকাশের ইতিহাসে আরেকটি গভীর কালো দাগ। প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) আজ এক ঘোষণায় জানিয়েছে, ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই কার্ড বাতিল মানে শুধু একটি কার্ড হারানো নয়—এটি হচ্ছে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ, সরকারি মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ, নথি যাচাই, মন্ত্রী-সচিবদের জবাবদিহির অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা।
এই সিদ্ধান্ত যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই ১৬৭ জনের অনেকেই বিগত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, পক্ষপাতমূলক নিয়োগ, বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এখন তাদের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। প্রশ্ন হলো—সরকার কার বিরুদ্ধে এতটা আতঙ্কিত যে, ১৬৭ জন কলমধারীর উপস্থিতি তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ালো?
একটি সরকার যদি সত্যিই গণতান্ত্রিক হয়, যদি সত্যি সে বিশ্বাস করে সুশাসনে, তাহলে প্রথমেই সে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। কারণ গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ—এটি ভুল ধরিয়ে দেয়, অপব্যবহার ঠেকায়, আর জনগণের চোখ ও কান হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এই সরকার স্পষ্টতই সেই চোখ তুলে ফেলতে চাইছে, সেই কান বন্ধ করে দিতে চাইছে।
এই কার্ড বাতিলের মাধ্যমে যেটি হয়েছে, তা কেবল একজন রিপোর্টারের কাজ বন্ধ হওয়া নয়—এটি হলো এক জাতীয় ভয়ের বার্তা: “সরকারবিরোধী সত্য লিখলে তোমাকেও সরিয়ে দেওয়া হবে।” এটা যেন একটি ডিজিটাল কালাকানুন—কিন্তু নতুন রূপে, নতুন পদ্ধতিতে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ তাদের আসল চেহারাই তুলে ধরছে। শুরুতে তারা ছাত্র আন্দোলনের নামে ক্ষমতা দখল করে। এরপর আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে। তারপর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বিচারপতিদের সরিয়ে দেয়। আর আজ—যে সাংবাদিকরা এই সব সত্য জাতির সামনে তুলে ধরছেন, তাদেরও চুপ করিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু ইতিহাস বলে—কলম থেমে থাকে না। কার্ড বাতিল করলে রিপোর্টিং বন্ধ হয় না। সত্য চাইলেই চাপা পড়ে না। এই দেশের মানুষ ভুলে যাবে না, কারা তাদের কাছ থেকে সত্য জানার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যারা মিথ্যার আশ্রয়ে রাষ্ট্র চালাতে চায়, তারা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
আমরা বলছি—১৬৭ সাংবাদিকের কার্ড বাতিল মানে ১৬ কোটি মানুষের চোখে কালো কাপড় বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। জনগণকে সত্য জানার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে গণমাধ্যম ছিল মুক্ত, আবার সেই দিন ফিরে আসবে। যতই দমন হোক, সত্যের আওয়াজ থামানো যাবে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।