উন্নয়নের বাজেট, মানুষের বাজেট: শেখ হাসিনা সরকারের অঙ্গীকার
আজ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার এই বাজেট পেশের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছেন যে, উন্নয়ন, গণমুখী পরিকল্পনা এবং জনকল্যাণই তার সরকারের মূল অঙ্গীকার। এই বাজেট কেবল একটি সংখ্যাভিত্তিক আর্থিক বিবরণ নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক উন্নয়ন রূপরেখা যা আগামী দিনের “স্মার্ট বাংলাদেশ” গঠনের পথে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তা—সবকিছুই সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪.২ শতাংশ। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫,৪৫,৪৫৯ কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২,৫৬,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাজেট ঘাটতি একটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সরকার যথাযথ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রবাসী আয়, রপ্তানি বাণিজ্য এবং স্থানীয় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনাও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
আগে যেখানে বাজেট কেবল নগরভিত্তিক উন্নয়নে সীমাবদ্ধ থাকতো, এখন তা বিস্তৃত হয়েছে গ্রাম, চরাঞ্চল, পাহাড় ও দুর্গম এলাকায়। শেখ হাসিনা সরকারের এই বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেশব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
শিক্ষা খাতে ১,০৯,৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৪.২৩% বেশি। বাজেটের ১৩.৭৪% এবং জিডিপির ১.৯৫% এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষা খাতকে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছেন। এ বছর স্কুল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষা বিস্তার, প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান এবং শিশুদের জন্য ডিজিটাল লার্নিং টুলস নিশ্চিত করার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।
আগে বিএনপি আমলে যেখানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল সীমিত, সেখানে আজ বাংলাদেশে স্কুলছুটের হার কমে এসেছে, শিক্ষার মান ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের ফলেই শিক্ষার দিগন্ত এখন শহর থেকে গ্রামেও প্রসারিত হয়েছে।
৩০,৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে শক্তি ও জ্বালানি খাতে, যেখানে ৭% বৃদ্ধি দেখা গেছে। এই খাতে সরকারের লক্ষ্য হলো—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তি নিশ্চিত করা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, গ্যাস অনুসন্ধান ও পাইপলাইন সম্প্রসারণের মতো প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে তারা ভবিষ্যতের জন্য ভাবছে।
পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে যেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল নিত্যদিনের সমস্যা, শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে এখন “ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” বাস্তবতা। দেশের ৯৮% জনগণ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন।
কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭,৩৩২ কোটি টাকা। যদিও কৃষি ভর্তুকি কিছুটা কমে ১৭,২৬১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে সরকারের লক্ষ্য হলো টেকসই ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের জীবিকা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গবেষণা, বীজ উন্নয়ন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ভর্তুকি ও কৃষি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বিএনপি আমলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক সময় জমিতে আগুন দিয়েছে। অথচ আজ সেই কৃষক ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষি ঋণ পাচ্ছেন, উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ৭.৮% বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় ২৭.৬% বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, চিকিৎসক নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং বিশেষজ্ঞ সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
করোনা মহামারিতে শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন—তা শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে তার সরকার যেভাবে প্রান্তিক জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছে, তা অতীতের কোন সরকার করতে পারেনি।
১,৩৬,০২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায়, যা গত বছরের তুলনায় ৯,৭৫৪ কোটি টাকা বেশি। আওয়ামী লীগ সরকার সর্বদা জনগণের দুঃসময়ে পাশে ছিল এবং থাকবে—এই বাজেট সেটার আরেকটি প্রমাণ।
বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব ভাতার গ্রহণযোগ্যতা ও পদ্ধতি আরও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে, যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়। অন্য সরকারের আমলে এসব সুবিধা ছিল সীমিত, অনিয়মপূর্ণ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট—আজ তা স্বচ্ছ ও সার্বজনীন।
এই বাজেট জাতিকে একটি সুসংগঠিত, আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তিনির্ভর, মানবিক ও সমতাভিত্তিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি এতদূর এসেছে। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার প্রমাণ করেছে—তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দেয় না, বাস্তবায়ন করে।
এখন সময় উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখার। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের এই যাত্রায় শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশে থাকা মানেই ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ পথ বেছে নেওয়া।
এই বাজেট আমাদের প্রত্যাশারই প্রতিফলন, এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে আরও সমৃদ্ধ, আরও মানবিক, আরও প্রযুক্তিনির্ভর।