বিজয়নগরে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ—গণতন্ত্রের নামে চালু হলো একচেটিয়া ভয় ও ভণ্ডামির রাজনীতি

আজ ১ নভেম্বর ২০২৪। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির একটি রাজনৈতিক সমাবেশের পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) হঠাৎ করে ঘোষণা দিল—সেই এলাকায় সকল ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ। একদিকে ছাত্ররা যখন-তখন রাস্তা দখল করে, সরকার পতনের স্লোগানে রাজপথ থমকে দেয়, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে হাইকোর্ট ঘেরাও করে, তখন সে বিক্ষোভ “গণআন্দোলন” হিসেবে প্রশ্রয় পায়। অথচ রাজনৈতিক দল যদি জনগণের সামনে কথা বলতে চায়, তাহলে সেটিকে “নিরাপত্তার ঝুঁকি” বলে নিষিদ্ধ করা হয়। এটাই হলো আজকের অন্তর্বর্তী সরকারের গণতন্ত্র।

এই নিষেধাজ্ঞা কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ভয় এবং গণতন্ত্র-ভীতি থেকে আসা একটি প্রতিক্রিয়া। তারা জানে, রাজনীতির ময়দানে যদি আবার দলগুলো মাঠে নামে, যদি আবার জনগণ নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে—তাহলে এই সরকারের দিন ফুরিয়ে যাবে। তাই আজ জনসভা বন্ধ, কাল হবে মিছিল নিষিদ্ধ, তারপর হবে রাজনীতিই নিষিদ্ধ—শুধু ছাত্রদের নামে চলবে নিয়ন্ত্রিত নাটক।

এই সরকারের হাতে ছাত্রদের আন্দোলন মানে হলো—ক্ষমতার হাতিয়ার। তাদের নামে যে কোনো পথ অবরোধ, যে কোনো হামলা বৈধ; কিন্তু একটি দল যদি শান্তিপূর্ণভাবে বক্তব্য রাখতে চায়, সেটা নাকি “নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে”! এই দ্বিচারিতা আসলে বোঝায়, অন্তর্বর্তী সরকার কার কথা শুনে চলে, কার ছক বাস্তবায়ন করে।

এখানে স্পষ্ট যে এই সরকার রাজনীতিকে ভয় পায়—বিশেষ করে নির্বাচনের দাবিকে, জনগণের দাবিকে, সংবিধান ফিরে পাওয়ার দাবিকে। তারা চায়, রাস্তায় শুধু থাকবে তাদের ছাত্রনেতারা, যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দাবিকে “অধিকার” বানিয়ে রাজপথ দখলে রাখবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো যেন স্তব্ধ থাকে, তাদের মুখ যেন বন্ধ থাকে।

এটা সেই সরকার, যারা বলে “সবার জন্য রাজনীতি মুক্ত”—কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়েছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, এবং এখন ধাপে ধাপে অন্য দলগুলোকে দমন করছে। বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করতে চেয়েছিল—তাদেরও আজ গণতন্ত্রের ছায়ায় দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার জানে—রাজনীতি ফিরলে, ভোট ফিরলে, মানুষ ফিরলে—তাদের রক্ষা নেই।

আমরা বলছি—এই নিষেধাজ্ঞা হঠাও। এই ভয়ভীতির রাজনীতি বন্ধ করো। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার থাকবে—ছাত্রদের যেমন আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর তেমনই থাকতে হবে। না হলে এ দেশ গণতন্ত্রের নামে একচেটিয়া শাসনের গুহায় বন্দি থাকবে। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর, এই রাজনীতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত—এটা কোনো সাময়িক সরকারের বন্দি রাখা যায় না।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *