বিচারপতিদের বিচার কার্য থেকে বিরত রাখা ও জাতীয় দিবস বাতিল—একটি রাষ্ট্রের আত্মাকে গলা টিপে হত্যার দিন

আজ ১৬ অক্টোবর ২০২৪। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি চরম বেদনাদায়ক ও কলঙ্কময় দিন। আজ একদিকে ১২ জন হাইকোর্ট বিচারপতিকে “চা চক্রে” অংশ নেওয়ার অপরাধে বিচার কার্য থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে, অন্যদিকে জাতীয় শোক দিবস, ৭ মার্চসহ আটটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব সিদ্ধান্ত যেন একে একে আমাদের সংবিধান, আমাদের ইতিহাস, আমাদের বিচার ব্যবস্থা, এমনকি আমাদের আত্মপরিচয়কেও নির্মমভাবে মুছে দেওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা।

বিচারপতিরা চা চক্রে অংশ নিয়েছেন, আর সেটাই এখন “অপরাধ”! তাদের স্বাভাবিক সামাজিক অংশগ্রহণকে “স্বার্থের দ্বন্দ্ব” বলে চালিয়ে, ১৬তম সংশোধনী নিয়ে বিচারাধীন স্পর্শকাতর বিষয়ে চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই সাময়িক বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূল কথা একটাই—বিচারপতিরা যদি আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, বা সেই সময়ের কোনো নেতার সাথে সামাজিক সম্পর্ক রাখেন, তাহলে তাদের আর বিচারপতি হিসেবে কাজ করার অধিকার নেই—এই হলো এই সরকারের নতুন আইন! বিচারপতিদের স্বাধীনতা আজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার খেলায় পরিণত হয়েছে। এই সরকারের চোখে ‘বিচার’ মানেই হলো ‘দলবাজি’, আর ‘স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা’ মানে হলো—শুধু আওয়ামী লীগবিরোধী রায় দেওয়া।

আর একই দিনে জাতির হৃদয়ের সঙ্গে সরাসরি আঘাত করা হলো আরও একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে—১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দিনসহ মোট ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করা হয়েছে। কী ভয়ঙ্কর বার্তা! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করার দিনটি বাতিল মানে শুধু একটি ছুটি বাতিল নয়, এটি এক গভীর রাজনৈতিক প্রতিশোধ, এক সাংস্কৃতিক হত্যাকাণ্ড। এই সরকার আসলে সরাসরি বলছে—তারা বঙ্গবন্ধুকে মানে না, তারা ১৯৭১-এর চেতনা মানে না, তারা ৭ মার্চের বর্ণময় আত্মদানের ইতিহাস মানে না। তারা চাইছে, আগামী প্রজন্ম যেন জানতেই না পারে—এই দেশের জন্ম হলো কিভাবে, এই দেশের নেতৃত্ব কে দিয়েছে, কাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে এসেছিল স্বাধীনতা।

এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ঘোষণা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যায়নি, তাই এখন ইতিহাস থেকে তাদের মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। দিবস মুছে ফেললেই ইতিহাস বদলে যাবে না। ৭ মার্চের ভাষণ কোনো দলীয় বক্তব্য নয়, এটি জাতির শিরদাঁড়া। ১৫ আগস্ট কেবল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, এটি বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় জাতীয় বেদনার দিন। সেটিকে বাতিল মানে জাতির ঘাড়ে পা দিয়ে ইতিহাসকে মাটিতে ফেলে দেওয়া।

অন্তর্বর্তী সরকার আজ যে পথ বেছে নিয়েছে, তা কেবল প্রতিশোধ নয়, এটি পাকিস্তানি ভাবধারার পুনরুত্থান। জামাত-বিএনপির নির্দেশে রাষ্ট্রকে বদলে ফেলার, শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার, আওয়ামী লীগকে শেষ করে নতুন “জামাত-সমর্থিত প্রজাতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করা হচ্ছে। বিচারবিভাগ থেকে আওয়ামী ভাবধারার লোক সরাও, দিবসগুলো মুছে ফেলো, সংবিধান বদলাও—এই একেকটি ধাপ সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন।

আমরা বলছি—এই সিদ্ধান্ত শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, এটি বাংলাদেশের জন্মবিরোধী ষড়যন্ত্র। যারা বঙ্গবন্ধুর শোক দিবস বাতিল করে, তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফেরত নিতে চায়। যারা বিচারপতিদের বিচার কার্য বন্ধ করে, তারা আইনের শাসন চায় না—তারা চায় ক্ষমতার চরমতম একনায়কতন্ত্র। এই সিদ্ধান্তগুলো প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এই ষড়যন্ত্রে জবাব আসবে—জনগণ থেকে, ইতিহাস থেকে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে। এই দেশ ইতিহাসবিহীন হতে দেবে না, নেতৃত্ববিহীন হতে দেবে না।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *