হাইকোর্ট অবরোধের নামে বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা—হাসনাত আবদুল্লাহদের মুখে এখন আইনের ভাষা!
আজ ১৪ অক্টোবর ২০২৪। ঢাকায় আবারও এক নজিরবিহীন ও বিপজ্জনক ঘোষণা এল “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” থেকে। এই আন্দোলনের তথাকথিত সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ আজ হাইকোর্ট অবরোধের ডাক দিয়েছেন, দাবি করেছেন—সব আওয়ামী লীগপন্থী বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। শুনে মনে হয়, যেন দেশটা এখন একদল ছাত্রনেতার ইচ্ছের উপর চলবে, যাদের কথায় বিচারপতি বসবেন, যাদের নির্দেশে সংবিধান রচিত হবে, আর যাদের অনুমতিতে আদালত খোলা থাকবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ কে? একজন কিশোর বয়সে ছাত্রলীগের ব্যানারে বড় হওয়া ছেলে, যিনি ক্ষমতার গন্ধ পেতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি ছেড়ে এক লাফে জামাত-বিএনপির দারস্থ হয়েছেন। আজ তিনিই আদালত অবরোধের ডাক দিয়ে জাতিকে বুঝিয়ে দিলেন—এই তথাকথিত ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই আর ‘ছাত্র’ নেই, এটি এখন সরাসরি রাষ্ট্র কাঠামো ভাঙার কৌশলে রূপান্তরিত হয়েছে। যার প্রথম টার্গেট—বিচার বিভাগ।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন অঙ্গ, যেখানে রাজনীতি কিংবা দলীয় রঙের ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। অথচ আজ হাসনাতদের কণ্ঠে আমরা শুনছি “আওয়ামী লীগপন্থী” বিচারপতিদের পদত্যাগের হুমকি। এই ভাষা শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটা একটি রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান। আজ যদি বিচারপতির রাজনৈতিক রঙ নির্ধারণ করে আদালত পরিচালিত হয়, তাহলে আগামীকাল পুলিশ, সেনাবাহিনী, এমনকি ডাক্তার ও শিক্ষক নিয়োগও কি দলের ভিত্তিতে হবে?
অন্তর্বর্তী সরকার এই অরাজকতা দেখে নিশ্চুপ—কারণ এটাই তো তাদের পরিকল্পনা। তারা জানে, আদালত থাকলে তাদের সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে আইনি বাধা আসবে। তারা জানে, শেখ হাসিনার সরকার এবং আওয়ামী লীগ যেসব মামলায় বারবার আইনের আশ্রয় নিয়েছে, সেসব রায়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই অন্তর্বর্তী প্রজেক্ট। তাই তারা হাইকোর্ট অবরোধের নামে বিচারপতিদের ভয় দেখাতে চায়, আর সেই হুমকির কণ্ঠস্বর এখন হাসনাত আবদুল্লাহ।
এই হাসনাত আর তার মতো কিছু ছাত্রনেতা আজ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আদালত ঘেরাও করছে। আজ তারা হাইকোর্টের গেট ঘেরাও করছে, কাল তারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে অপদস্থ করবে, তারপর একদিন বলবে—“এই সংবিধান মানি না, নতুন আদালত চাই।” এটিই ছিল সেই “নতুন প্রজাতন্ত্র”র রূপরেখা, যা তারা কয়েক মাস আগেই ঘোষণা করেছিল—আজ তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের আশীর্বাদে।
বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি করা মানে বিচারবিভাগের স্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। এটা গণতন্ত্রের উপর ছুরিকাঘাত। যারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের হঠানোর অর্থ হলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত পুরো রাষ্ট্র কাঠামোকেই অবৈধ প্রমাণ করা। এটা কি কেবল সমালোচনা, না কি সুপরিকল্পিত গণতান্ত্রিক বিপর্যয়?
আমরা বলছি—হাসনাত আবদুল্লাহদের এই ঘোষণা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি ষড়যন্ত্র। যারা বিচারবিভাগে হস্তক্ষেপ করতে চায়, যারা আদালত ঘেরাও করতে চায়, তাদের থামাতে হবে এখনই। অন্তর্বর্তী সরকার যদি এটি থামাতে না পারে, তাহলে এটাই প্রমাণ হবে যে তারা এই চক্রান্তের মদদদাতা। বিচারবিভাগ স্বাধীন ছিল, আছে, থাকবে—শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আইনের শাসনের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব। এদের হাতে আদালত গেলে আইনের লাশ পড়ে থাকবে রাস্তায়।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।