ডেপুটি কমিশনার নিয়োগে দুর্নীতি—অন্তর্বর্তী সরকারের স্বঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের আসল চেহারা প্রকাশিত
আজ ১০ অক্টোবর ২০২৪। দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় চলছে। বলা হচ্ছে, এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সময় আর্থিক লেনদেন হয়েছে, ঘুষ-বাণিজ্য হয়েছে। আর সেই অভিযোগ তদন্তে এখন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের কাজ ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা। শুনতে মনে হতে পারে এটি একটি জরুরি উদ্যোগ—কিন্তু বাস্তবে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার আরেকটি নাটক মাত্র।
এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তারা বলেছিল—তারা একটি “অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ ও শুদ্ধ” প্রশাসন গঠন করবে। অথচ কিছু মাসের মধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে—এই সরকারের হাতে দুর্নীতিও রাজনীতির মতোই পক্ষপাতদুষ্ট। যারা আওয়ামী লীগের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে, তাদেরই প্রশাসনের উচ্চপদে বসানো হয়েছে; আর যারা নীতিনিষ্ঠ ছিলেন, শেখ হাসিনার আমলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন—তাদের একের পর এক বদলি, হুমকি, অথবা হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
আজকের এই দুর্নীতির অভিযোগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি সেই রাজনীতিরই ফল, যেখানে কর্মদক্ষতা নয়, বরং “কে আওয়ামী লীগবিরোধী”—এই মাপকাঠিতে নিয়োগ হয়েছে। ডিসির মতো একটি পদ, যেখানে জনগণের সঙ্গে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সংযোগ থাকে, সেখানে যদি ঘুষ আর রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ হয়, তাহলে প্রশাসনের ভেতরের ঘুণ কতটা গভীর, তা বুঝতে বাকি থাকে না।
আর যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার নেতৃত্বে আনা হয়েছে আসিফ নজরুল—যিনি বহু বছর ধরে “বুদ্ধিজীবী” নামক আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করে আসছেন। গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে নিয়মিত আক্রমণ করাই ছিল যার নিত্যদিনের কাজ, সেই ব্যক্তি এখন দেশের শুদ্ধতা ও সুশাসনের মুখ্য রক্ষক! এটা কি নিরপেক্ষ তদন্ত, না কি দুর্নীতিকে চাপা দিয়ে “দায়সারা প্রতিবেদন” তৈরির এক নতুন কৌশল?
আসিফ নজরুল কি কখনো আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসনে ঘুষ বা অনিয়ম নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন তৈরি করেছেন? না। কারণ তখন তার নজর শুধু শেখ হাসিনার দিকে ছিল, উন্নয়নের সব কিছুকেই তিনি “দুর্নীতি” বলে অভিহিত করতেন। আজ যখন তার মদদে গঠিত সরকারের নিয়োগেই ঘুষের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তখন তিনি “তদন্ত কমিটির” নেতৃত্বে এসে আবার জনগণের চোখে ধুলো দিতে চাইছেন।
এই হলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকৃত চেহারা—একদিকে মুখে “সংস্কার”, “দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান”, আর অন্যদিকে বাস্তবে চলছে লুটপাট, পক্ষপাত, দলীয়করণ আর ক্ষমতার দখল। দেশের প্রশাসনকে আওয়ামী লীগশূন্য করতে গিয়ে আজ তারা দুর্নীতিবাজদের হাতে প্রশাসন তুলে দিচ্ছে। এই দুর্নীতি শুধু চাকরি বিক্রির অপরাধ নয়—এটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিক্রি করে দেওয়ার এক ভয়ংকর উদাহরণ।
আমরা বলছি—এই দুর্নীতির তদন্ত করতে হলে, সত্যিকারের নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, বিচারযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে করতে হবে। আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তদন্ত মানেই দাগ চাপা দেওয়া। এই তদন্ত নাটক নয়, দায়ীদের শাস্তি চাই। আর এই তদন্তের অজুহাতে সরকার নিজের মুখ বাঁচাতে পারবে না—এই সরকারই আজ দুর্নীতির সবচেয়ে বড় রক্ষাকর্তা। শেখ হাসিনার সময় যে সুশাসনের ভিত্তি ছিল, তা আজ চুরমার। জনগণ তা ভুলে যাবে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।