বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রাজনৈতিক রূপান্তরের ঘোষণা—অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় ভবিষ্যতের জামাত-বিএনপি সংস্করণ?
আজ ৭ অক্টোবর ২০২৪, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতারা জানিয়েছেন যে তারা ভবিষ্যতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করছেন। সময়সীমা এখনো নির্ধারিত না হলেও তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের তথাকথিত “সংস্কার প্রক্রিয়া”কে সমর্থন করছেন এবং “গঠনমূলক সমালোচনার” নামে নিজেরাই সরকারঘেঁষা রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ নিচ্ছেন।
এই বক্তব্য আজ জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই সেই আন্দোলন, যাদের দাবি ছিল শিক্ষা, সমতা, ন্যায্যতা—আজ তারা সেই সব দাবি ভুলে, সরকারি আশীর্বাদে গাড়ি-বাড়ি আর আলো-ঝলমলে জীবনের স্বপ্নে নিজেদের রঙ পাল্টাচ্ছে। একেকজন নেতার শরীরে এখন দামি স্যুট, এস্কর্ট, রাজনৈতিক প্রটোকল—আর মুখে শোনা যাচ্ছে “দল গঠনের” অভিপ্রায়। এটা কি আন্দোলনের রূপ? নাকি সুবিধাবাদী প্রতিস্থাপন রাজনীতির সূচনা?
যারা বলেছিল, তারা “রাজনীতির বাইরে থাকবে”, “ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে” দাঁড়াবে, আজ তারাই অন্তর্বর্তী সরকারের মঞ্চে ঘুরে ঘুরে প্রচার চালাচ্ছে, ড. ইউনূসের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে, আর ক্ষমতার ছায়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইছে। প্রশ্ন উঠছে—তাদের এই রূপান্তর আদৌ কি স্বাভাবিক, নাকি আগে থেকেই সাজানো এক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন?
এই আন্দোলনের জন্ম থেকেই অনেকেই বলেছিল—এটা ছাত্রদের নয়, এটা পর্দার আড়ালে জামাত-বিএনপি ঘরানার একটি প্রকল্প। আজ তা প্রমাণ হচ্ছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে জামাতপন্থী, কেউ কেউ বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা, কেউ কেউ আবার নিজে ছাত্রলীগের ছায়ায় বড় হয়ে এখন সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। চাকরি বা ক্যারিয়ার নয়, তারা চায় রাজনীতি—তাও আবার নির্বাচিত নয়, চেয়ারে বসার রাজনীতি।
তাদের দায়িত্ব এখন সংস্কার প্রক্রিয়ার “সমালোচনা” নামক নাটক মঞ্চস্থ করা, যেখানে সমালোচনার আড়ালেই লুকিয়ে থাকে প্রকারান্তরে সমর্থন, আর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তুতি। আজ তারা কথা বলছে মঞ্চে, কাল তাদের দেখা যাবে পররাষ্ট্র নীতির আলোচনায়, অর্থনৈতিক মিটিংয়ে, কিংবা ভিসা পাওয়া প্রজেক্টে।
এই পুরো পরিস্থিতির পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের সুস্পষ্ট মদদ ও পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার জানে—যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার নির্বাচন হয়, তারা কোনোভাবেই জয়ী হতে পারবে না। তাই তারা ছাত্রদের ব্যবহার করে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি তৈরির ছক কষছে, যেটি আওয়ামী লীগকে বিকল্পহীন না হোক, অন্তত দুর্বল করে দিতে পারে।
কিন্তু জাতি ভুলে যায়নি—এই আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই জড়িত ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র, যারা ১৯৭২-এর সংবিধান বাতিলের দাবি করেছিল, রাষ্ট্রপতি অপসারণের হুমকি দিয়েছিল, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিল, আর সর্বোপরি “নতুন প্রজাতন্ত্র” ঘোষণা করতে চেয়েছিল। আজ তাদের সেই মৌলিক এজেন্ডা শুধু ভদ্র ভাষায় ঢেকে ফেলা হয়েছে।
আমরা বলছি—এই আন্দোলন, এই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দল, এই তথাকথিত সংস্কার সমর্থন—সবই একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের দখল নিতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যাবে না, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ভাঙা যাবে না। জাতি জেগে আছে, ইতিহাস জানে কারা দেশ গড়ে, আর কারা ছদ্মবেশে ধ্বংস চায়।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।