মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল: ইতিহাসের সম্মান, ছাত্রদের স্বত্ব, আর বিএনপি-জামায়াতের পরিচিত ষড়যন্ত্র

আজ ০৫ জুন ২০২৪, বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন—মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০% কোটা পুনর্বহাল। এটি শুধুই একটি প্রশাসনিক বা আইনি সিদ্ধান্ত নয়; এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাস, গৌরব ও আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি। আবার এই রায় ঘিরে ছাত্রদের একটি বাস্তব অসন্তোষও দেখা দিয়েছে। এর মাঝখানে আবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত, যারা অতীতে একাধিকবার একই কৌশলে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো সাধারণ ঘটনা নয়—এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। সেই যুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার দাবি রাখে। মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কেউ যেন দয়া বা দান মনে না করে—এটি একটি জাতিগত দায় ও সম্মান

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকার আবারো প্রমাণ করেছে—রাষ্ট্র ইতিহাস বিকৃতির কাছে মাথা নত করবে না

হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। তারা মনে করে, কোটা পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনা হলে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে

এটি একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। অনেক ছাত্রবৎসর পড়াশোনা করে বিসিএস বা সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেয়। তাই তাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

সরকারের উচিত হবে এই ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবধর্মী, যৌক্তিক ও অংশগ্রহণমূলক সমাধানের দিকে যাওয়া। কোটা থাকা উচিত, তবে সেটি স্বচ্ছ, নিরীক্ষাযোগ্য ও সুষম হওয়া উচিত

ছাত্রদের এই ন্যায্য উদ্বেগকে বিএনপি-জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার করছে। এটি তারা নতুন কিছু নয়। চলুন দেখি, অতীতে তারা কী কী করেছে—

🔸 মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা (১৯৭১):
জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

🔸 যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন (২০০১):
বিএনপি সরকার যুদ্ধাপরাধীদের, যেমন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদদের মন্ত্রী বানায়।

🔸 গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব (১৯৯৩):
বিএনপি সরকার পাকিস্তানপন্থী জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দেয়।

🔸 যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা:
যখন শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে, তখন বিএনপি-জামায়াত তা বন্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে অপপ্রচারে নামে।

🔸 হেফাজতের মাধ্যমে হামলা (২০১৩):
বিএনপি-জামায়াত হেফাজতের কাঁধে ভর করে গণজাগরণ মঞ্চ ধ্বংস করতে চায় এবং মতিঝিলে সহিংসতার নেতৃত্ব দেয়।

🔸 আগুন-সন্ত্রাস (২০১৪-১৫):
সরকার পতনের আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষ, নারী ও শিশুদের গায়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পুড়িয়ে মারে

🔸 ছাত্র আন্দোলনে অনুপ্রবেশ:
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন—সব জায়গায় তারা ছাত্রদের আন্দোলনে ছদ্মবেশে ঢুকে সরকারবিরোধী সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা করে

আজকের আন্দোলনেও ঠিক তাই হচ্ছে। সাধারণ ছাত্রদের উদ্বেগের পেছনে জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতা, বিএনপি-ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার চলছে মিথ্যা তথ্য, ভুয়া ছবি, বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ানো।

হাইকোর্টের রায় ইতিহাসের প্রতি একটি শ্রদ্ধার প্রতীক। সরকার এই রায় বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছে—তারা রাজনীতি নয়, নীতিকে গুরুত্ব দেয়। তবে ছাত্রদের যেসব প্রশ্ন আছে, সেগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি। যেন বিভ্রান্তি না ছড়ায়, রাজনৈতিক অপশক্তি সুযোগ না পায়।

আমরা চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানও থাকুক, আবার ছাত্রদের ন্যায্যতাও বজায় থাকুক। আর চাই—বিএনপি-জামায়াতের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র যেন আর কখনো শিক্ষার্থীদের ঢাল বানিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে সফল না হয়

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ—অগ্রগতির পথে, ইতিহাসের আলোয়।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *