সংস্কারের নামে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের চক্রান্ত—কমিশনের আড়ালে চলছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মহাপরিকল্পনা
আজ ৩ অক্টোবর ২০২৪, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জন প্রশাসনসহ ১১টি খাতে সংস্কারের জন্য পৃথক কমিশন গঠন করেছে। শুনে যেন মনে হয় একটি দূরদর্শী রাষ্ট্র পরিকল্পনা শুরু হয়েছে, কিন্তু বাস্তবটা অনেক বেশি শঙ্কার, অনেক বেশি ষড়যন্ত্রে মোড়ানো। কারণ এই কমিশনের গঠন, নেতৃত্ব এবং উদ্দেশ্য একটাই—শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে জামাত-বিএনপি অনুগত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া।
এই কমিশনগুলোর নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের নাম শুনলেই দেশের মানুষ বুঝে যায় কাদের পছন্দে, কোন উদ্দেশ্যে এসব সিদ্ধান্ত। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে আলী রিয়াজকে—যিনি বহুদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং বারবার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আপোষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বদিউল আলম মজুমদার, যিনি বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ করে এসেছেন, অথচ কখনোই বিএনপি-জামাতের নির্বাচনবর্জনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে আনা হয়েছে ইফতেখারুজ্জামান, যিনি বরাবরই উন্নয়নের নামে দুর্নীতির অভিযোগের আড়ালে আওয়ামী লীগের অর্জনকেই টার্গেট করে গেছেন।
এই কমিশনগুলো আসলে একেকটি রাজনৈতিক অস্ত্র, যার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দিনে রাষ্ট্র কাঠামোর মেরুদণ্ড ভেঙে নিজেদের সুবিধামতো একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করতে চায়। তারা জানে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৈরি শক্তিশালী প্রশাসন, নিরপেক্ষ নির্বাচনী কাঠামো এবং প্রগতিশীল সংবিধান থাকলে, তারা ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে না। তাই আজ তারা কমিশনের নামে সেই ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিতে চায়, যেটি ৫০ বছরের অর্জন।
এই কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছাড়াই, কেবলমাত্র একজন বিতর্কিত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত। একথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে এই সরকার কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট বহন করে না। তাহলে প্রশ্ন হলো—কে তাদের এই সংস্কারের অধিকার দিলো? তারা কি জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, নাকি একদল পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির হীন স্বার্থের মোড়কে প্রতিষ্ঠিত ছায়া সরকার?
আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল, তখন এই সব ব্যক্তি প্রতিনিয়ত সেই সরকারকে “দুর্নীতিগ্রস্ত”, “অনির্বাচিত”, “দমনমূলক” বলে আক্রমণ করেছে। আজ তারা নিজেরাই রাষ্ট্রের সংস্কার নামের রিমোট কন্ট্রোল হাতে পেয়ে গেছেন। এটি কেবলই দ্বিচারিতা নয়—এটি ইতিহাস বিকৃতির ঘোষণা।
এই তথাকথিত সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট সংকেত দেওয়া হয়েছে—যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে, তাদের জন্য আগামী দিনে রাষ্ট্রযন্ত্রে জায়গা থাকবে না। তাদের জায়গা নিচ্ছে সেইসব মানুষ, যারা একসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেছে, যারা নির্বাচন এলে হুমকি দেয়, যারা সুশীলতার আড়ালে রাজনৈতিক বিদ্বেষে বিষ ছড়ায়।
আমরা বলছি—সংস্কারের নামে এই প্রহসন চলতে দেওয়া যাবে না। সংবিধান, নির্বাচন, প্রশাসন, আইন—সবকিছু আওয়ামী লীগবিরোধী চক্রের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা আজ স্পষ্ট। এই পরিকল্পনা রুখে দিতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই প্রকৃত সংস্কার, প্রকৃত উন্নয়ন, এবং প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব। এই ষড়যন্ত্রকারী কমিশন বাতিল করতে হবে, রাষ্ট্র আবার ফিরিয়ে দিতে হবে জনগণের হাতে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।