“আইন নিজের হাতে তুলে নিলে ব্যবস্থা নেব”—ড. ইউনূসের হুমকি আসলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার প্রচেষ্টা

আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। জাতির উদ্দেশে আবারও মুখ খুললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভাষণে তিনি সতর্ক করলেন—কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, এবং যেসব ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবে, সেখানেই নাকি সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা করলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও জন প্রশাসনের সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এই বক্তব্য শুনে জাতি হতবাক নয়, বরং ক্ষুব্ধ। কারণ যারা জাতিকে অরাজকতায় ঠেলে দিয়ে আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নামে বুলি আওড়াচ্ছেন, তারাই তো এই অরাজকতার জন্মদাতা। আজ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে কারা? কে আগুন দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে? কে হামলা চালাচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর? কে ধ্বংস করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ভবন, এমনকি শহীদ মিনার? এই সমস্ত ঘটনার পেছনে কি সাধারণ জনগণ, নাকি সেই সব ‘ছাত্র’ আর দলীয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা, যাদেরকে আপনার সরকার প্রশ্রয় দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে?

ড. ইউনূস বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন, অথচ এক মাস ধরে পুরো দেশ জ্বলছে, শত শত মানুষ আহত, পুলিশ সদস্য নিহত, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার, বাড়িঘর ধ্বংস—কিন্তু কোথাও তার “কঠোর ব্যবস্থা” দেখা যায়নি। তার এই হুঁশিয়ারি এখন আর জনগণকে ভয় দেখায় না, বরং তার ব্যর্থতা, পক্ষপাতিত্ব আর ষড়যন্ত্রের নগ্নতা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

তিনি আবার কমিশনের ঘোষণা দিলেন—নির্বাচন, পুলিশ, বিচার, প্রশাসন—সবকিছুর। শুনলে মনে হয় তিনি এই দেশ গড়তে আসছেন। কিন্তু জাতি জানে, এই সংস্কারের কথা বলে যাদের বদলি করা হচ্ছে, তা কোনো পক্ষপাতহীন প্রক্রিয়া নয়, বরং সচেতনভাবে আওয়ামী লীগপন্থী, শেখ হাসিনার আমলে প্রতিষ্ঠিত দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের সরিয়ে তাদের জায়গায় জামাত-বিএনপি ঘরানার ও আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের বসানো হচ্ছে। এই সংস্কার আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রে গোপন দখলদারির নামান্তর।

নির্বাচন কমিশনের সংস্কার—এটা কি নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য, না কি আগামী নির্বাচনে জামাত-বিএনপির জয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে? বিচার বিভাগের সংস্কার কি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, না কি আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার রায় গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য? পুলিশ প্রশাসন পুনর্গঠন মানে কি রাজনৈতিক আদেশ বাস্তবায়নের বাহিনী গড়ে তোলা?

ড. ইউনূস বলেন, এসব করছেন জাতির কল্যাণের জন্য, অথচ জাতি জানে তিনি নিজেই দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চক্রান্তের কারিগর। তিনি পদ্মা সেতু আটকে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকে চিঠি লিখেছিলেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিকশিত একটি জাতিকে অন্ধকারে ফেরত নেওয়ার যাত্রাপথের প্রধান পরিচালক। আজ তিনি সেই একই মানুষ, যিনি নিজেকে “জনগণের নেতা” বলে দাবি করছেন।

এই ভাষণে তিনি যা বলেননি, তা হলো—কেন আওয়ামী লীগের নেতাদের গায়ে মামলা লাগানো হচ্ছে? কেন ছাত্রদের নামে বেনামে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে? কেন দেশজুড়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে যাতে জনগণের রায় মুছে ফেলা যায়?

আমরা বলছি—আপনার প্রতিটি শব্দ এখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা বললে তা শোনা যায় না, কারণ আপনি নিজেই অস্থিরতার কারখানা। আপনি সংস্কারের কথা বললে জনগণ সন্দেহ করে, কারণ আপনার সংস্কার মানে একপাক্ষিক সাজানো শত্রুতার প্ল্যান। আপনি ঐক্যের কথা বললে জাতি হাসে, কারণ আপনার ঐক্য মানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন।

এই সরকার, এই উপদেষ্টা, এই ভাষণ—সবই একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ নাটক। কিন্তু বাংলাদেশ ইতিহাসের দেশ, এখানে এসব ষড়যন্ত্র টিকে না।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *