শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশজুড়ে সহিংসতা—বাংলাদেশে আবারও “ত্রাসের রাজনীতি” ফিরিয়ে আনলো অন্তর্বর্তী সরকার

আজ ১৮ আগস্ট ২০২৪। বিগত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা ১৯৭৫-এর পর জাতির জীবনে আরেকবার আতঙ্কের অন্ধকার যুগের সূচনা করেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ১৮ আগস্ট পর্যন্ত গোটা দেশ রক্তাক্ত সহিংসতায় কেঁপে উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি, রাজনৈতিক কার্যালয়, এমনকি ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এই নৈরাজ্যের হাত থেকে রেহাই পায়নি। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত—নরসিংদী, ফেনী, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, যশোর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, কক্সবাজার, নীলফামারী—প্রতিটি জেলার খবর আজ একইরকম: ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড।

এই সহিংসতার পেছনে কারা? আর তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কে? প্রশ্নের উত্তর আজ আর কঠিন নয়। তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় যেভাবে আওয়ামী লীগ কর্মীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করে দেয়—এই সরকার ম্যান্ডেটবিহীন হওয়ার পাশাপাশি ভয়ংকর প্রতিশোধপরায়ণ। আওয়ামী লীগ সমর্থন করলেই আজ কারও বাড়ি নিরাপদ নয়, ব্যবসা নিরাপদ নয়, এমনকি প্রাণটাও নিরাপদ নয়।

এ কেমন দেশ বানানো হচ্ছে? যেখানে একদল সন্ত্রাসী খোলা মাঠে, দিনের আলোয় আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছে। যেসব মানুষ এক যুগ ধরে এই দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছে, তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে—তাদের আজ রাষ্ট্রের নামেই দমন করা হচ্ছে?

এমনকি এই সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও রেহাই পায়নি। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর এসেছে একাধিক জেলা থেকে। মন্দিরে আগুন, মূর্তি ভাঙচুর, বাড়ি-ঘর লুট—সবই যেন পূর্বপরিকল্পিত। এটি নিছক হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া জনরোষ নয়—এটি পরিকল্পিত হামলা, যাকে প্রশ্রয় দিয়েছে সেই অন্তর্বর্তী সরকার যারা নিজেদের “নিরপেক্ষ” দাবি করে, অথচ অন্ধভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তিগুলোর হাতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।

এত বড় সহিংসতা, অথচ সরকার চুপ। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কোথায়? তিনি কি এত মানুষের রক্ত দেখে নির্বিকার? নাকি তিনি সেই চিরচেনা মৌনতার মধ্য দিয়েই বুঝিয়ে দিচ্ছেন—এই সহিংসতা তার চোখে “প্রয়োজনে বৈধ”? তার নিজের নিরাপত্তা ঘিরে আছে কঠোর বলয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা কোথায়? সংখ্যালঘুদের রক্ষায় কার দায়িত্ব?

শেখ হাসিনা কোনো সশস্ত্র প্রতিরোধ করেননি। তিনি রক্তপাত এড়াতে নিজে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তার এই আত্মত্যাগকে দুর্বলতা ভেবে যারা আগুন নিয়ে খেলছে, তারা ভুল করছে। আওয়ামী লীগ একদিনে গড়ে ওঠেনি, শেখ হাসিনাও একদিনে জননেত্রী হননি। দেশের মানুষ জানে কারা দেশ বানিয়েছে আর কারা দেশ পোড়াতে চায়।

এই সহিংসতা ২০০১ সালের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছিল, সংখ্যালঘুদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল। আজ সেই পুরনো পদ্ধতি আবার ফিরিয়ে আনছে একদল নতুন মুখ—যারা আসলে সেই পুরনো অপশক্তিরই উত্তরসূরি।

আমরা বলছি—এদেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু কারো রক্ত ঝরানোর অধিকার নেই। আমরা বলছি—আওয়ামী লীগ এই দেশের গণমানুষের দল, যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে, উন্নয়ন এনেছে, স্বাধীনতার মান রেখেছে। সেই দলকে মুছে ফেলতে গিয়ে যারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তারা আসলে দেশের ইতিহাস ধ্বংস করছে।

এই সহিংসতার জন্য এই অন্তর্বর্তী সরকারই দায়ী। ৪৪ জন পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে—এটা কেবল দায়িত্বহীনতা নয়, এটা রাষ্ট্র পরিচালনার নামে হত্যার অনুমোদন।

আমরা বলছি—এই রক্তপাত বন্ধ করো। এই সন্ত্রাস বন্ধ করো। এই অপশক্তির সরকারকে আর এক মুহূর্তও মেনে নেওয়া যাবে না। জনগণের সরকার ফেরাতে হবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এই দেশ আবার শান্তি ও স্থিতির পথে ফিরবে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *