বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম
বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে, তা আর কোনো গণতান্ত্রিক ব্যাখ্যার মধ্যে পড়ে না। ৮ আগস্ট যেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা আসলে দেশের ওপর একটি অবৈধ শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নামান্তর। ড. মুহাম্মদ ইউনুস—একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি—এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন, আর তার প্রথম দফাতেই যে কর্মকাণ্ডগুলো দেখা গেল, তাতে স্পষ্ট যে এটি একটি সুপরিকল্পিত গণতন্ত্র-বিরোধী ও আওয়ামী লীগ-বিরোধী প্রতিশোধপরায়ণ এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা।
ড. ইউনুস ২৭টি মন্ত্রণালয়ের “স্বঘোষিত সম্রাট”
একজন ব্যক্তির হাতে ২৭টি মন্ত্রণালয়! এটা কি গণতন্ত্রের রূপ? নাকি এক নব্য একনায়কের আত্মপ্রকাশ? ইতিহাসে দেখা গেছে—যখন কোনো নেতা রাষ্ট্রের অধিকাংশ মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখেন, তখন তা হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার শুরুও—ঠিক যেমনটা এর আগে পাকিস্তানে আইয়ুব খান বা জেনারেল এরশাদের সময়ে দেখা গিয়েছিল।
ড. ইউনুস “অসাংবিধানিক” প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় এসে, এখন নিজেকে রূপ দিচ্ছেন সর্বেসর্বা হিসেবে। অথচ শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন—গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে। তিনি কখনোই মন্ত্রীসভা বা প্রশাসনকে একচ্ছত্রভাবে চালাননি।
ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশের ইতিহাসেই ছাত্র রাজনীতি গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই ছাত্রসমাজ ছিল সামনের কাতারে। আজ এই “অন্তর্বর্তী সরকার” এক ঘোষণায় তা মুছে দিতে চাইছে?
এই সিদ্ধান্ত স্বাধীনতার মূলে আঘাত। আসলে ছাত্রদের কণ্ঠরোধ করাই এই সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য। তারা জানে—এই তরুণ প্রজন্মই একদিন প্রশ্ন করবে, “কেন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি দেশের নেতৃত্বে?” তাই আজ তাদের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
মামলা প্রত্যাহার: আইনের শাসন নয়, প্রতিশোধের রাজনীতি
৯,০০০ মামলার কথিত প্রত্যাহারের তালিকাটি যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত, তা বলাই বাহুল্য। এই মামলাগুলোর অনেকগুলোতে রয়েছে নাশকতা, সহিংসতা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার আমলে হয়েছে বলেই এই মামলা বাতিল করা হচ্ছে—এটা কেমন বিচারনীতি?
শেখ হাসিনা কখনোই আইনের বাইরে গিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি। তিনি বারবার আইন ও আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। অথচ আজ এই “অন্তর্বর্তী সরকার” বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে নিজেদের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট উদ্দেশ্য পূরণে।
এই সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ—মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ধরন, ছাত্র রাজনীতির দমন, মামলার রাজনৈতিক ব্যবহার—সবই একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হচ্ছে: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করা এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করা।
ড. ইউনুসের অতীতও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পদ্মা সেতু আটকে দিতে তিনি বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে কোনো প্রমাণ ছিল না, কেবল নিজের ক্ষুদ্র আক্রোশ ছিল। আজ সেই একই মানুষ নিজেকে দেশের শাসক রূপে দাঁড় করিয়ে জাতির ভাগ্য নিয়ে খেলছেন।
এই সরকার দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত নয়। এদের ম্যান্ডেট নেই। তাই জনগণের প্রতি আহ্বান:
“আমরা এই অন্তর্বর্তী সরকার মানি না। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাখ্যান করি। শেখ হাসিনা আমাদের নেতা, এবং তিনিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার যোগ্য নেতা।”
বাংলাদেশে নেতৃত্ব জনগণের ভোটেই নির্ধারিত হবে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয়।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।