১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল—জাতির পিতার মর্যাদায় সরাসরি আঘাত
বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ আরেকটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হলো। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, আগামীকাল ১৫ আগস্ট আর “জাতীয় শোক দিবসের” জন্য সাধারণ ছুটি থাকবে না। তারা বলছে—এই সিদ্ধান্ত নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতি জানে, এই সিদ্ধান্ত কোনো গণতান্ত্রিক আলোচনার ফসল নয়—এটি একটি গভীর, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার লক্ষ্য জাতির পিতাকে জাতির মনন থেকে মুছে ফেলা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না—তিনি ছিলেন সমগ্র বাঙালি জাতির নেতা। তাঁর কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছিল “এইবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”, তাঁর আহ্বানেই লক্ষ প্রাণ রক্ত দিয়েছিল, তাঁর নেতৃত্বেই আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি সংবিধান। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে তাঁকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যা ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আর এই দিনটিকেই আমরা জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছি, গভীর শ্রদ্ধা ও আত্মবোধ নিয়ে।
আজ এই ছুটি বাতিল করে, আসলে কী বার্তা দিতে চাইছে এই তথাকথিত “অন্তর্বর্তী সরকার”? তারা কি বলতে চাইছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু এই জাতির শোকের দিন নয়? তারা কি বুঝিয়ে দিতে চাইছে, ১৫ আগস্ট আর বাঙালির জাতীয় স্মৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ নয়? নাকি তারা সেই পুরনো শক্তিগুলোর—জামাত, বিএনপি ও পাকিস্তানপন্থীদের—স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে, যারা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চায়, তাঁর আদর্শকে বিকৃত করতে চায়?
আমরা ভুলে যাইনি, কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারে বাধা দিয়েছিল। আমরা ভুলে যাইনি, কারা এই দিনটিকে “খুশির দিবস” বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করেছিল। আজ যারা অন্তর্বর্তী সরকারের ছায়ায় একে একে রাষ্ট্রীয় প্রতীক, ইতিহাস ও চেতনাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে—তারা সেই পুরনো শত্রুদেরই নতুন রূপ।
এই সরকার একে একে সব কিছু মুছে দিতে চাচ্ছে—ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছে, ৯ হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছে, জামাতের সঙ্গে বৈঠক করেছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ডাকের প্রশ্রয় দিয়েছে। আজ তারা বঙ্গবন্ধুর শোকদিবস বাতিল করল। কাল তারা কি বলবে—মুক্তিযুদ্ধই ছিল ভ্রান্ত? বাংলাদেশের জন্মই ভুল ছিল?
এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি ছুটি বাতিল নয়—এটি জাতির আত্মপরিচয়ের উপর বর্বর আঘাত। যারা বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে কুণ্ঠাবোধ করে, যারা এই শোকদিবসে শ্রদ্ধা জানাতে অপারগ, তারা কীভাবে এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে?
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ বছর ধরে আমরা ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে, শোকদিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে, নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আজ সেই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে যারা উঠে পড়ে লেগেছে—তারা কারা, জাতি তা ভালো করেই চিনে ফেলেছে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির পিতা। তাঁর শোকের দিন কোনো দলীয় বিষয় নয়—এটি জাতির চেতনার প্রতীক। সেই শোকদিবস বাতিল করার মানে হলো জাতিকেই অস্বীকার করা, স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা।
এই সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে জাতি তাদের গণধিক্কার জানাবে। কারণ, যারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে, তারা কখনোই বাঙালির প্রতিনিধি হতে পারে না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।