সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সম্পদ জব্দ: আইনের শাসনের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু ঘটনা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে—নির্বাচনের মত, যুদ্ধের মত, বা কখনো কখনো একটি সাহসী সিদ্ধান্তের মত। ২০২৪ সালের ১২ জুন, বাংলাদেশ এমন একটি সময় অতিক্রম করল, যখন দেশের একটি অত্যন্ত উচ্চপদস্থ সাবেক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার আরেকবার প্রমাণ করলো—এ দেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে, যার প্রেক্ষিতে আদালত তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন। দেশের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, যিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুধু একটি ব্যক্তির নয়—এটি রাষ্ট্রীয় সুশাসনের একটি বড় পরীক্ষা।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দীর্ঘ তদন্ত শেষে জানতে পারে যে বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণ জমি, বিলাসবহুল বাড়ি, কোম্পানির শেয়ার, ব্যাংক একাউন্টসহ বহু সম্পদ রয়েছে যার উৎস অস্বচ্ছ এবং অপ্রামাণ্য। এই সম্পদের উৎস জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে মিলছে না।
দুদক প্রমাণসহ আদালতে আবেদন করে এবং আদালত ১২ জুন ২০২৪ সালে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের এসব সম্পদ সাময়িক জব্দ করার নির্দেশ দেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের মানুষ দেখতে পেল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আর নীরব দর্শক নয়—তারা এখন সক্রিয়, এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করল যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কোনো রকম রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত প্রভাবকে প্রাধান্য দেয় না। এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত, যা পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময় দেখা যেত না।
একজন সাবেক আইজিপি—যিনি দেশের একসময়কার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন—তাঁর বিরুদ্ধেও যখন তদন্ত হয় এবং সম্পদ জব্দ হয়, তখন দেশের জনগণ বুঝতে পারে: দেশে এখন আইনের শাসন কার্যকর।
এই পদক্ষেপ দেশের তরুণ সমাজ, সরকারি কর্মকর্তারা ও ভবিষ্যতের প্রশাসকগণকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।
তবে এটিও সত্যি যে, এই ঘটনা সরকারের বা প্রশাসনের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সামনে নিয়ে এসেছে। একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরা পড়েনি কেন? এর অর্থ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ তদারকি ব্যবস্থা এবং সম্পদ যাচাই প্রক্রিয়ায় এখনও ঘাটতি আছে।
সরকার এই ইস্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন আরও কঠোরভাবে পাবলিক সার্ভেন্টদের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে, এবং দুর্নীতির শিকড় যত গভীরেই থাকুক না কেন, তা যেন উপড়ে ফেলা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে, সরকার দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজের ঘরও পরিষ্কার করতে পিছপা নয়। এটাই আসল সুশাসনের প্রতিচ্ছবি।
আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
-
সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা,
-
রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের লাইফস্টাইল নিরীক্ষা,
-
সরকারি ক্রয়, উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদিতে ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
জনগণের প্রত্যাশা, এই দৃঢ় অবস্থান শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিয়মিত চর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন অন্যায়ের চিন্তাও না করে।
আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে গর্বিত যে, আমি এমন একটি সরকারের পাশে আছি যারা নীতিকে প্রাধান্য দেয়, ব্যক্তিকে নয়।
সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু আইন প্রয়োগ নয়—এটি একটি মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা। আমি বিশ্বাস করি, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের প্রশাসনে সততা, জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও সম্পদ জব্দের নির্দেশ একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করেছে—তারা কারো চাপ বা পরিচয়ের কাছে নয়, বরং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
এই ধরণের পদক্ষেপ আরও অব্যাহত থাকুক, দেশের প্রতিটি স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক—এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।