শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি—রাষ্ট্রপতির আহ্বান আসলে ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়ার

আজ ২১ অক্টোবর ২০২৪। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতিকে উদ্দেশ্য করে এক “নিরপেক্ষতা” পূর্ণ আহ্বান জানালেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে যেন বিতর্ক না তোলা হয়। তার ভাষায়, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগ স্বীকৃত হয়েছে”—এবং সেই বিষয়ে “আর কোনো আলোচনা প্রয়োজন নেই।” কিন্তু প্রশ্ন হলো—যে পদত্যাগপত্র দেশের জনগণ কখনো দেখেনি, শেখ হাসিনার নিজের মুখে কখনো শোনা যায়নি, সংবিধান অনুযায়ী কোনো প্রকাশ্যে গৃহীত হয়নি—সেই ‘পদত্যাগ’ যদি বাস্তবে ঘটেই না থাকে, তবে রাষ্ট্রপতি কোন ‘স্বীকৃতি’র ভিত্তিতে জনগণকে চুপ থাকার উপদেশ দিচ্ছেন?

শেখ হাসিনা কখনো পদত্যাগ করেননি—এটা দেশের মানুষ জানে। তিনি বারবার বলেছেন, তিনি রক্তপাত এড়াতে ‘সরে দাঁড়িয়েছেন’ সাময়িকভাবে, কোনো আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগ করলে, সেই পদত্যাগপত্র তো রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকার কথা, সংবিধান অনুযায়ী তা গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার কথা। কোথায় সেই গেজেট? কোথায় সেই চিঠি? কেন জনগণ তা একবারও চোখে দেখল না?

রাষ্ট্রপতি আজ জনগণকে “বিতর্ক না তুলতে” বলছেন, অথচ আসল বিতর্ক তো তার কার্যালয় থেকেই জন্ম নিয়েছে। যদি সত্যিই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতেন, তাহলে আজ এত অস্বচ্ছতা, এত অজানা ব্যাখ্যা, এত প্রশ্ন থাকত না। এই পরিস্থিতি দেখে বরং স্পষ্ট হয়—আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে সরাতে একটি চক্রান্তের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে “সরিয়ে” দেওয়া হয়েছে, আর সেটিকে আদালতের ছায়া দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের মিত্ররা জানে—শেখ হাসিনাকে ভোটের মাধ্যমে হারানো যাবে না, তাই তারা প্রশাসনিক পথ ব্যবহার করে তাকে মাইনাস করতে চায়। আর এই কাজে রাষ্ট্রপতি দায়সারা ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন—যেন সবকিছু আদালতের আদেশ, সংবিধানের ব্যাখ্যা আর “সাংবিধানিক প্রক্রিয়া”-র মোড়কে ঘটছে। অথচ সত্যি হলো—শেখ হাসিনা সরে দাঁড়াননি, তাকে সরানো হয়েছে।

আজ যে রাষ্ট্রপতি জনগণকে নীরব থাকতে বলছেন, তিনি কি ভুলে গেছেন—রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, প্রশ্ন তোলা তাদের অধিকার? তিনি কি ভুলে গেছেন—স্বাধীন রাষ্ট্রে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাখ্যা চাইবে জনগণ, তা আর যত গোপন রাখার চেষ্টা হোক না কেন?

আমরা বলছি—যদি পদত্যাগ হয়ে থাকে, তবে সেই চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করুন। যদি না হয়ে থাকে, তবে মিথ্যার জাল গুটিয়ে নিন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছিল জনগণের রায়ে বৈধ, তাকে সরিয়ে কাগুজে আদেশে নতুন সরকার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এই জাতি স্মৃতিভ্রষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি যদি সত্যিই জনগণের অভিভাবক হন, তবে মিথ্যাকে সত্য বলার খেলায় আর অংশ নেবেন না।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *