শেখ হাসিনার নিরাপদ প্রস্থান—জীবনের জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্য আত্মত্যাগ

আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দুপুরের পর থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে প্রতিবেশী ভারত সরকারের সহযোগিতায় নিরাপদে দেশত্যাগ করেছেন। গুজবটি যখন ছড়ায়, তখন হাজার হাজার মানুষ ঢাকার পথে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে, আর দেশের বহু স্থানে সহিংসতার আগুন জ্বলছে।

তবে এই প্রস্থান যদি সত্যি হয়েও থাকে, তাহলে সেটি কোনো পরাজয়ের চিহ্ন নয়—বরং একটি সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নেত্রীর সাধারণ জনগণ এবং নিজের প্রাণ রক্ষার কৌশলী পদক্ষেপ, যার পেছনে রয়েছে অতীত ইতিহাসের তিক্ত শিক্ষা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যে উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলেছে, তা কোনোভাবে অস্বীকার করার উপায় নেই। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে উচ্চ স্থান—এসব ছিল তার অর্জন। কিন্তু আজ সেই দেশেই ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের’ নামে একটি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চক্রান্ত মিলে দেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়।

শেখ হাসিনা জানতেন, ১৯৭৫ সালে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এভাবেই ঘেরাও করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই দুঃসহ স্মৃতি, সেই অমানবিক ষড়যন্ত্র আজ আবার ফিরে এসেছিল—আন্দোলনের নামে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নয়, বরং মুছে দেওয়ার জন্য।

তাই যদি সত্যিই শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে থাকেন, তবে সেটা একটি রাষ্ট্রনায়কের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। কারণ তিনি জানেন—দেশে রক্তপাত চলতে থাকলে, তা শুধুমাত্র একটি সরকার নয়, পুরো বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলবে।

“কোটা সংস্কার আন্দোলন” বলে যেটি শুরু হয়েছিল, সেটি খুব দ্রুত রূপ নিয়েছিল “সরকার পতনের আন্দোলনে”—এবং তারপর আরও ভয়ানক কিছুতে। জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির বিভিন্ন ফ্রন্ট সংগঠন আন্দোলনে ঢুকে পড়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন করে তোলে।

ছাত্রদের ব্যবহার করে যারা ‘জনগণের জাগরণ’ বানাতে চেয়েছিল, তাদের আসল লক্ষ্য ছিল একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা, একটি সফল নেতৃত্বকে হত্যা করা, একটি মুক্তিযুদ্ধের উত্তরসূরিকে অপমান করা।

আমরা জানি না এই ‘প্রস্থান’ স্থায়ী কিনা, কিংবা এর পেছনে কী কী কূটনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা এটুকু নিশ্চিত জানি—শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি জানতেন, নিজের জীবন বাঁচিয়ে থাকলে আবারও ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করা সম্ভব। মৃত্যু হলে আর কিছুই সম্ভব নয়।

আজ যারা গর্ব করে বলছে “সরকার হটেছে”, তারা কি ভাবছে—বাংলাদেশ এখন নিরাপদ? তারা কি বুঝতে পারছে—যিনি বিদায় নিলেন, তিনি কেবল একজন রাজনীতিক নন, তিনি ছিলেন ইতিহাসের একমাত্র নারী নেতা, যিনি বাঙালিকে উন্নয়নের দৃশ্যমান রূপ দেখাতে পেরেছেন?

আজকের দিনটি আনন্দের নয়, এটি গভীর চিন্তার দিন। যদি শেখ হাসিনা সত্যিই দেশ ছেড়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ভাবতে হবে—আমরা তাকে রাখতে পারলাম না কেন?

শুধু আন্দোলনের নামে নয়, একটি কৌশলগত ক্ষমতা পরিবর্তনের অপারেশন সফল হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ কি আজ সত্যিই জিতেছে, নাকি জাতি আরও একবার পরাজিত হয়েছে ষড়যন্ত্রের কাছে?

আজকে নয়, কাল বুঝবে বাংলাদেশ—শেখ হাসিনা হারিয়ে গেলে কী হারালাম আমরা।
যিনি জীবন বাঁচালেন, হয়তো একদিন আবার ফিরে আসবেন—এবার আরও শক্তিশালী ইতিহাস হয়ে।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *