রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মুখে সতর্কতা, কাজে স্থবিরতা—শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আজ আর নেই
আজ ৯ জানুয়ারি ২০২৫। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কোনো “মানবিক করিডোর” স্থাপনে সম্মত নয় এবং দেশ কোনো প্রক্সি যুদ্ধে জড়াবে না। একইসাথে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ কোনো উদ্যোগ নেবে না। এই কথাগুলি শুনতে যতই ভারসাম্যপূর্ণ মনে হোক, বাস্তবতা হলো—এখানে নেই কোনো কূটনৈতিক দৃঢ়তা, নেই শেখ হাসিনার মতো সাহসিকতা, আর নেই বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে সম্মানের আসনে তুলে ধরার সেই রাজনৈতিক বিচক্ষণতা।
রোহিঙ্গা সংকট কোনো সাধারণ শরণার্থী ইস্যু নয়—এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে এই সংকট শুরু হবার পর, বাংলাদেশ মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া, কক্সবাজারে শৃঙ্খলিতভাবে ক্যাম্প স্থাপন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়—এসব কিছুই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফল।
শুধু মানবিকতা নয়—শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দক্ষতার সঙ্গে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করেছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, ওআইসি, রোহিঙ্গা জাতিগত গণহত্যার মামলায় গাম্বিয়ার মাধ্যমে আইসিজেতে মামলা—এসবই হয়েছে তার হাত ধরেই। ফলে তখন বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু আজ যখন সেই সরকার নেই, আজকের তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার মুখে বলছে ‘প্রক্সি যুদ্ধে জড়াবে না’, ‘মানবিক করিডোর চাই না’—কিন্তু ভেতরে কোনো কৌশল নেই, কোনো উদ্যোগ নেই, কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা নেই। শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সেরে ফেলছে, আর রোহিঙ্গা সমস্যা আরো গভীর হচ্ছে।
এই সরকার আসলে রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতেই এত ব্যস্ত যে তারা রোহিঙ্গা সংকটকে একটি জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু হিসেবেও নিতে পারছে না। এর ফলে আজ রোহিঙ্গারা হতাশ, আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাচ্ছে, ক্যাম্পে অপরাধ বাড়ছে—আর এই সরকার শুধু ‘আমরা করব না’ বলেই নিজেদের দায়িত্ব ভুলে বসে আছে।
আমরা বলছি—রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার যে নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মান এনে দিয়েছিল, সেই শক্তিকেই আজ এই অন্তর্বর্তী সরকার নষ্ট করছে। মুখে না বললে কী হবে—ক্ষমতাহীন, দিকহীন, পরিকল্পনাহীন এই সরকারের অবস্থান বাস্তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার কূটনীতি, সাহস ও মানবিক নেতৃত্বকেই ফিরিয়ে আনা আজ সময়ের দাবি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।