বিজয়ের দিনে ‘জাতীয় ঐক্য’র নামে সময়ক্ষেপণের ফাঁদ—নির্বাচন নয়, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার নীলনকশা

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। যে দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই দিনে বাংলাদেশের মাটি মুক্ত হয়েছিল রক্তে ভেজা মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ে। অথচ এই গৌরবময় দিনে আজ যারা ক্ষমতার চেয়ারে বসে আছেন, তারা আবারও ইতিহাসের সঙ্গে তামাশা শুরু করেছেন—“জাতীয় ঐক্য” নামের মুখোশ পরে, “নির্বাচন” নামক প্রতিশ্রুতির তারিখ পিছিয়ে দিয়ে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঘোষণা করেছেন, একটি “জাতীয় ঐক্য গঠনের কমিশন” গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কথিত সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হবে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন—পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে হতে পারে! অর্থাৎ আরেক বছর দেরি—আরেকটি বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার সুযোগ!

প্রশ্ন হচ্ছে—জাতীয় ঐক্য গঠনের কথা আজ বলা হচ্ছে কেন? শেখ হাসিনা যখন বৈধ, গণভোটে নির্বাচিত সরকার চালিয়েছেন, তখন তো কোনো ঐক্য কমিশন ছিল না, তখন তো কেউ বলেনি রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। আজ যখন শেখ হাসিনাকে ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জামাত-বিএনপি ঘরানার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তখন হঠাৎ করে কেন ‘ঐক্য’?

আসলে এই কথিত কমিশন হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সময়ক্ষেপণের প্ল্যান—যাতে করে আগামী এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা ভোগ করতে পারে, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে মাঠ পুরোপুরি নিজেদের করে তুলতে পারে। যাকে বলা হচ্ছে “আলোচনার সুযোগ”—আসলে তা হচ্ছে “আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচন”-এর মঞ্চ প্রস্তুতি।

আজ যারা ঐক্যের কথা বলছেন, তারাই শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখে দাঁড় করিয়েছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর দিবস বাতিল করেছেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছেন। তারা গণতন্ত্রের সব জানালা বন্ধ করে রেখেছে, আর আজ মুখে বলছে “আলোচনা হবে”? কাদের সঙ্গে আলোচনা? জামাত-বিএনপির সঙ্গে? যাদের হাতে শহিদ জননেত্রীর রক্ত, যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরাধিকার? এ তো জাতীয় ঐক্য নয়, এ হচ্ছে জাতীয় আত্মসমর্পণ।

আর নির্বাচন ২০২৬ সালে? কোন সংবিধান বলে এতদিন অন্তর্বর্তী সরকার থাকতে পারে? যারা নিজেদের মুখেই বলেছে “অস্থায়ী দায়িত্ব”, তারা এখন স্থায়ীভাবে শিকড় গাড়ার জন্যই এই তারিখপেছানো খেলায় নেমেছে।

আমরা বলছি—১৬ ডিসেম্বর একাত্তরের বিজয়ের দিন, আর আজ ২০২৪ সালে এই দিনেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জাতীয় ঐক্য মানে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফিরে যাওয়া, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনা বৈধ সরকার। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার একটি অশুভ জোটের চক্রান্ত, এই কমিশন গণতন্ত্রের প্রতিস্থাপন নয়—এটি তার হত্যার প্রস্তুতি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *