বিএনপির “সংবিধানিক সংস্কার” প্রস্তাব—ক্ষমতা দখলের কৌশলে পুরোনো ফন্দির নতুন সংস্করণ

আজ ২৫ নভেম্বর ২০২৪। বিএনপি তাদের কথিত “সংবিধানিক সংস্কার” প্রস্তাব প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন এবং বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছে। শুনতে যতই গঠনমূলক ও “রাষ্ট্রপক্ষীয়” মনে হোক, এই প্রস্তাব আসলে একটিই বার্তা বহন করে—জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার নতুন রাস্তা তৈরি করা, যাতে অতীতের মতোই পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়।

বিএনপি এই সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে সেই মুখে, যারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল, রাষ্ট্রযন্ত্রকে হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রণে দিয়েছিল, বিচার বিভাগকে দলীয় করেছিল, সংখ্যালঘুদের ওপরে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছিল। আজ তারা বলছে—“রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াও”, কারণ তারা জানে সংসদীয় গণতন্ত্রে তারা কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ মানে হবে—একটি নিয়ন্ত্রিত ও নির্বাচিত নয় এমন একটি পরিষদ, যেখানে তারা কিছু ‘মনোনীত বন্ধু’ বসিয়ে সরকারের পথ রুদ্ধ করবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পেছনের চিন্তা তো পুরোটাই স্পষ্ট—আবারও একটি মধ্যবর্তী সরকার এনে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে, তাদের নিজেদের মতো ভোটের নাটক সাজানো।

বিএনপি ভুলে গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যখন চালু ছিল, তখন তারাই সেটাকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে নির্বাচন বানচাল করেছিল, ২০০৬-২০০৭ এ দেশকে অরাজকতায় ঠেলে দিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে সেনা-সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তারা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযানের নামে দেশের নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি করেছিল।

এবং আজকের অন্তর্বর্তী সরকার সেই একই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে—আওয়ামী লীগকে মাইনাস করো, শেখ হাসিনাকে সরাও, তারপর বিএনপি-জামাত আবার ফিরে আসুক। আজ বিএনপি এই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে আসলে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রকাশ্যে বলছে, “আমরা প্রস্তুত, মঞ্চ পরিষ্কার করো।” তাই এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই সরকার কি এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথ তৈরি করছে?

আমরা বলছি—বাংলাদেশের সংবিধান কোনো ষড়যন্ত্রকারীর খেলার মাঠ নয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন, যার ভিত্তি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত। বিএনপি-জামাত মিলে আজ যে সংস্কারের বুলি আওড়াচ্ছে, তা জনগণের রায় নয়, ক্ষমতালোভীদের পুরনো চাল। এই প্রস্তাব জাতির জন্য নয়, বরং ইতিহাস ধ্বংস করে আবার পাকিস্তানপন্থী চেতনা ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এই চক্রান্ত রুখে দেওয়া হবে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *