“দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” নামের ছদ্মবেশে জাতির ইতিহাসের অবমাননা—এনসিপির ঘোষণা এক নতুন চক্রান্তের মুখোশ
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। মণিক মিয়া এভিনিউতে এক বিশাল সমাবেশে তথাকথিত “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করল। এই দলটি দাবি করছে, তারা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা বলছে, তারা “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” গড়ে তুলবে, “নতুন সংবিধান” দেবে এবং জনগণই হবে ক্ষমতার উৎস। কথাগুলো যতটা উচ্চকিত, বাস্তবতায় ততটাই বিপজ্জনক, বিভ্রান্তিকর, আর দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য বিদ্রোহ।
এই “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” কথাটির মানে কী? প্রথম প্রজাতন্ত্র মানেই তো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র। তাহলে যারা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র চাইছে, তারা কী আসলে স্বাধীনতার ভিত্তি মুছে দিতে চায়? ৭২-এর সংবিধান, রাষ্ট্রভাষা বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষতা—সবকিছু কি নতুন করে লিখবে তারা? তাহলে তারা আর জামাত-শিবিরের মধ্যে পার্থক্য কী?
এই তথাকথিত এনসিপির মূল চরিত্ররা কারা? কেউ একসময় ছাত্রদলে ছিল, কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাস দখলে ছিল, কেউ জামাতপন্থী বুদ্ধিজীবী—আর এখন তারা সবাই মিলে “নাগরিক সমাজের” নাম করে রাষ্ট্র চালাতে চায়। তারা এই ঘোষণায় বলেছে, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে”—যেখানে তাদের পুরো আন্দোলনের পেছনে কোটি কোটি টাকার উৎস এখনও অজানা। বিদেশি লবিস্ট, এনজিওর অর্থ, আর দলছুট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ছায়ায় দাঁড়িয়ে যারা রাষ্ট্র বদলাতে চায়, তারা কোনোদিন জনগণের প্রতিনিধি হতে পারে না।
অন্যদিকে, এই ঘটনার নেপথ্য নায়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নিরব ও নিরপেক্ষ দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, নিরাপত্তা, সহানুভূতিশীল মিডিয়া কাভারেজ ছাড়া আজ এনসিপি নামের এই দল জন্মই নিত না। এটি স্পষ্ট—অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দিয়ে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা, যাদের অতীত নেই, চেতনা নেই, আর আদর্শ তো দূরের কথা, আত্মত্যাগের কোনো ছোঁয়াও নেই।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ একশ বছর এগিয়ে গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শতভাগ বিদ্যুৎ, নারীর ক্ষমতায়ন—এইসব অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” নয়, দরকার “প্রথম প্রজাতন্ত্র”-এর আত্মার পুনর্জাগরণ। জনগণ জানে কারা তাদের ভালো চায়, আর কারা ক্ষমতার নেশায় ইতিহাস মুছে দিতে চায়।
আমরা বলছি—এই এনসিপি একটি বিপজ্জনক মোড়ের নাম, যা আসলে জামাত-বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকারের যৌথ চক্রান্তের ফল। এরা যদি রাষ্ট্র চালায়, তবে বাংলাদেশ থাকবে না—থাকবে কেবল বিদেশি মদদপুষ্ট, গণবিচ্ছিন্ন, আদর্শহীন এক বিভ্রান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।