“দুর্নীতির মামলা মিথ্যা”—কি আসলে মিথ্যা? নাকি সত্য ধামাচাপা দেওয়ার ফরমুলা? — অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতি-নির্ভর ভবিষ্যতের অশনি সঙ্কেত
আজ ১১ আগস্ট ২০২৪। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের জন্য আজকের দিনটি আরও একটি গভীর আঘাতের প্রতীক। কারণ, আজ আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলা “মিথ্যা ও ভিত্তিহীন” বলে বাতিল করে দিয়েছেন—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সরাসরি সুপারিশে। এই ঘটনাটি দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে: বিচার কি আজ সরকারের হাতের পুতুলে পরিণত হলো? দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কি এখন কেবল নির্বাচিত সরকারবিরোধী একটি হাতিয়ার?
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি ছিল তাঁর এনজিও এবং গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলা—যেখানে হাজারো কর্মী অভিযোগ করেছিলেন ন্যায্য লাভের অংশ না পাওয়ার জন্য। শ্রমিকদের প্রাপ্য লভ্যাংশ আটকে রাখা, লুকানো হিসাব, এবং আন্তর্জাতিক অনুদানের অপব্যবহার—এসব ছিল মামলার মূল ভিত্তি।
প্রশ্ন হচ্ছে: কীভাবে এতগুলো শ্রমিকের অভিযোগ, শ্রম আইন লঙ্ঘনের একাধিক প্রমাণ, এবং তদন্তে ওঠে আসা আর্থিক অনিয়ম “মিথ্যা ও ভিত্তিহীন” বলে বাতিল হয়ে যায়?
আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: কেন এই মামলা প্রত্যাহার করা হলো মাত্র তিন দিনের মধ্যে—যেই সরকারের প্রধান এই মামলার প্রধান আসামি?
দুদক দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে—যেখানে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করে এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েছে।
অথচ আজ, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই—দুদক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে! এটি কি কাকতালীয়? না কি এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত?
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল—যখন ক্ষমতাসীন “নিরপেক্ষ” প্রশাসন রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ভিত্তিতে মামলা চালাত ও প্রত্যাহার করত। আজ আমরা সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি—নতুন মোড়কে, নতুন নামধারী সরকারের মাধ্যমে।
একটি দুর্নীতির মামলা, যেখানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে—তার তদন্ত, শুনানি, এবং রায়—সবকিছুই মাত্র কদিনে শেষ হয়ে যায়? সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর আদালতের পেছনে ঘোরে একটি ভূমি মামলার রায়ের জন্য, অথচ দেশের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলার “সুষ্ঠু নিষ্পত্তি” হয়ে যায় মাত্র এক সপ্তাহে!
এটা কি বিচার, নাকি পূর্ব নির্ধারিত নাটকের শেষ দৃশ্য?
শেখ হাসিনা সরকার বারবার প্রমাণ করেছে—আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। নিজ দলের লোকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে তিনি দ্বিধা করেননি। অনেক প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে, বিচার হয়েছে।
তুলনায়, ড. ইউনূস নিজে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেই প্রথমেই করলেন—
- নিজের মামলা প্রত্যাহার,
- নিজেকে ২৭টি মন্ত্রণালয়ের সর্বময় ক্ষমতা দিলেন,
- ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিলেন,
- ৯,০০০ রাজনৈতিক মামলা তুলে দিলেন,
এটাই কি নতুন “গণতন্ত্র”?
এই ঘটনা একটাই বার্তা দেয়—এই অন্তর্বর্তী সরকার তাদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো কিছু করতে পারে। আইন, নীতি, ন্যায়বিচার—সবকিছুই এখন তাদের হাতে একটি হাতিয়ার মাত্র।
আজ ড. ইউনূস নিজের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিলেন, কাল তার মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরিয়ে নেবেন, আর পরশু দিন—এই দেশের ভবিষ্যত প্রশ্নবিদ্ধ করবেন এমন কাউকেই কারাবন্দি করবেন?
এই বিচারব্যবস্থা, এই সরকার, এই ষড়যন্ত্র—সবই গণতন্ত্রের মুখে চপেটাঘাত। জনগণ জানে—এই সিদ্ধান্ত জনগণের ভোটে নয়, ষড়যন্ত্র ও বাইরের শক্তির ইচ্ছার ফসল।
আমরা বলছি—“এই রায় মানি না। এই বিচার মানি না। এই সরকার মানি না।”
আমরা বলছি—“শেখ হাসিনা আমাদের নির্বাচিত নেতা। তিনিই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। আইন ও বিচার যেন কারো ব্যক্তিগত রক্ষা-কবচ না হয়।”
গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আজই আওয়াজ তুলতে হবে—
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।