জাতীয় ঐক্যের নামে ধোঁকাবাজির নতুন অধ্যায়—ড. ইউনূসের ভাষণে ষড়যন্ত্রের প্রতিধ্বনি
আজ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি ভাষণ দিয়েছেন, যেটিকে তিনি বলেছেন “অহংকারবিহীন, ব্যক্তিস্বার্থহীন এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান।” অথচ তার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য আর প্রতিটি প্রতিশ্রুতি ছিল এতটাই খালি ও ভন্ডামিপূর্ণ যে দেশের মানুষ আজ আরও স্পষ্টভাবে বুঝে ফেলেছে—এই সরকার কার স্বার্থে কাজ করছে, কার রং গায়ে মেখে “গণতন্ত্র” নামক নাটক মঞ্চস্থ করছে।
ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি একটি “গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ” গড়তে চান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশে কারা অন্তর্ভুক্ত? যুদ্ধাপরাধের দল জামাত? অগ্নিসংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার নায়ক বিএনপি? নাকি সেইসব তথাকথিত “ছাত্রনেতা,” যারা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে নতুন প্রজাতন্ত্র চায়? আর বাদ পড়ছে কারা? শেখ হাসিনা, যিনি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন? আওয়ামী লীগ, যাদের নেতৃত্বে দেশ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এসেছে, উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে? তাহলে এই “জাতীয় ঐক্য” কার সঙ্গে আর কার বিরুদ্ধে?
ড. ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন—“অর্থবহ সংস্কার দরকার।” এই সংস্কারের নামে ইতোমধ্যে যা ঘটেছে, তা জনগণের চোখের সামনেই স্পষ্ট: ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি জ্বালানো, গ্রেপ্তার, হয়রানি, বিচারপতিদের একযোগে বদলি, আনসার বাহিনীর অভ্যন্তরীণ যেসব কর্মকর্তা সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে মুখ খুলেছিলেন—তাদের প্রত্যাহার। এসবই কি সংস্কার? নাকি প্রতিশোধ?
তিনি আবার ভাষণে সতর্ক করলেন—“সরকার যেন স্বেচ্ছাচারিতার ছাপ না ফেলে।” কিন্তু বিগত একমাসে যেভাবে দেশের ভিতরে ভয় আর ত্রাস ছড়ানো হয়েছে, যেভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী নয়—শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধপন্থী কণ্ঠগুলোকেও চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই ভাষা এখন শুধুই প্রহসনের প্রতিধ্বনি। এই ড. ইউনূসই তো ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি পদ্মা সেতু আটকে দিতে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। তিনিই তো দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নকে আন্তর্জাতিক মহলে কলঙ্কিত করতে মরিয়া ছিলেন—আজ তিনি জাতিকে “ঐক্য” শেখাচ্ছেন?
তার বক্তৃতা আরেকটি জিনিস পরিষ্কার করে দিল—এই অন্তর্বর্তী সরকার আসলে শুধু একটি অস্থায়ী প্রশাসন নয়, বরং একটি সুসংগঠিত, দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রকল্প, যেখানে বিএনপি ও জামাত তাদের পরাজিত পরিকল্পনাগুলিকে নতুন মোড়কে বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে। সেই সুযোগের প্রধান কারিগর হচ্ছেন ইউনূস নিজেই, যিনি তার “নিরপেক্ষতা” আর “মানবিকতার” আড়ালে ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর ভিত্তিকে খুঁটে খুঁটে সরিয়ে দিচ্ছেন।
এই ভাষণ কোনো ঐক্যের আহ্বান নয়—এটা ছিল একটি বিপজ্জনক বিভ্রান্তি, যার মাধ্যমে জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা উন্নয়নের রূপকার, যারা নির্বাচিত—তাদের বাদ দিয়ে কেমন গণতন্ত্র হয়? যারা যুদ্ধাপরাধে দোষী, যারা সংবিধান ছিঁড়ে ফেলতে চায়, যারা মন্দির পুড়িয়েছে, সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে—তাদের নিয়ে কেমন জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়?
এই ভাষণে আমরা জাতির ভবিষ্যতের জন্য কোনো দিশা দেখিনি। আমরা দেখেছি—একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আত্মবঞ্চনা, একজন ষড়যন্ত্রী নেতার নতুন মাস্ক পরে পুরোনো খেলায় নামা। আমরা স্পষ্টভাবে জানি—এই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের নয়, এই ভাষণ দেশের ঐক্যের জন্য নয়, এটি জামাত-বিএনপির স্বার্থরক্ষার একটি অজুহাত মাত্র।
আমরা বলছি—ড. ইউনূসের এই “জাতীয় ঐক্য” জাতির সঙ্গে প্রতারণা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই প্রকৃত ঐক্য, প্রকৃত গণতন্ত্র এবং প্রকৃত বাংলাদেশ টিকে থাকবে। এই প্রহসন বেশি দিন চলবে না। জাতি জেগে আছে। ইতিহাস জেগে আছে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।