ছাত্র আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন: বিরোধী দলগুলোর সংহতি না রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

২০২৪ সালের ৬ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রকাশ্যে সমর্থন ঘোষণা করে। এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ন্যায্য দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” তিনি দাবি করেন, এই আন্দোলন শুধুমাত্র কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরশাসনের অবসানের একটি বৃহত্তর অংশ।

বিএনপির এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বেশ কয়েকটি ছোট ও মাঝারি বিরোধী দলও ছাত্র আন্দোলনের প্রতি তাদের একাত্মতা প্রকাশ করে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, “বিরোধী দলগুলোর সমর্থন আমাদের মনোবল বাড়িয়েছে,” তবে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর জড়িত হওয়া আন্দোলনের প্রকৃত স্বার্থকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি এবং নির্বাচনকে ‘একদলীয়’ আখ্যা দিয়ে বর্জন করে। নির্বাচনের পর তারা দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে, যার অংশ হিসেবেই কোটা আন্দোলনকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

  • নির্বাচনের পর সরকারের প্রতি আস্থা টালমাটাল দেখানো: নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নিজেরাই রাজনৈতিক প্রান্তে চলে যায়। এখন তারা চাচ্ছে—ছাত্র আন্দোলনের আবেগকে পুঁজি করে সরকারকে জনগণের কাছে ‘অজনপ্রিয়’ ও ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হিসেবে তুলে ধরতে।
  • আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির অপচেষ্টা: নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলের তেমন সমর্থন পায়নি। এখন তারা দেশে একটি কৃত্রিম ‘গণঅসন্তোষের’ আবহ তৈরি করে বিদেশি রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
  • ছাত্রদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক মোড় দেওয়া: ইতিহাস বলে, অতীতেও বিএনপি ২০১৩-১৪ সালে বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষার্থী সংগঠনের আন্দোলনকে ব্যবহার করে দেশে সহিংসতা চালিয়েছে। এবারও ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘গণআন্দোলন’ বানিয়ে রাজপথে সহিংস পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
  • সংগঠনের দুর্বলতা ঢাকতে ভিন্ন কৌশল: বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট করেছে। এখন তারা একটি ‘চলমান আন্দোলনে’ ঢুকে পড়ে সেটিকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় ব্যবহার করতে চাইছে, যেন মাঠে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করা যায়।

অন্যদিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল কোটা সংস্কার ইস্যুতে অত্যন্ত মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, “মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে, তবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য সুযোগ রাখতে হবে—যাতে তারা সমাজের মূলধারায় আসতে পারে।” তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি শান্ত থাকার এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানান।

সরকারের এমন দায়িত্বশীল অবস্থানের পরেও যখন কোনো রাজনৈতিক শক্তি আন্দোলনকে উত্তপ্ত করে পরিস্থিতিকে সহিংস করে তোলার চেষ্টা করে, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সংস্কার নয়—বরং সরকারের সদ্যপ্রাপ্ত গণভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করা।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, একটি স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের আবেগকে সম্মান জানাতে হলে সেটা যেন রাজনৈতিক স্বার্থের বলি না হয়—সেটাও নিশ্চিত করা উচিত। সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান প্রমাণ করে—এই ইস্যুর সমাধানে গঠনমূলক পথই শ্রেয়।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *