ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ—স্বাধীনতার পতাকাবাহী সংগঠনের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা আঘাত

আজ ২৩ অক্টোবর ২০২৪। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন একটি দিন, যে দিনটি শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি ইতিহাস বিকৃতির একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আজ অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। অভিযোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে “সহিংসতা ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন”। কিন্তু এই কথার আড়ালে যা লুকিয়ে আছে, তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনের উপর এক নির্মম প্রতিশোধ, একটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঘোষণা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনো একদিনের সংগঠন নয়। এটি জন্ম নিয়েছিল ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে এই সংগঠন বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারিতে। এই সংগঠনই ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে স্বাধীনতার রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই সংগঠনই ছিল পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম ছাত্র প্রতিরোধের মুখ।

এই সংগঠন আজ নিষিদ্ধ? শুধুমাত্র একটি অভিযোগে, যেখানে কোনো তদন্ত নেই, কোনো যাচাই নেই, কেবল জামাত-বিএনপির সাজানো রাজনৈতিক গল্প। অথচ আজও যারা ক্যাম্পাসে অস্ত্র চালায়, বোমা ছোঁড়ে, শিক্ষকদের মারধর করে, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়—সেই ছাত্রদল, সেই ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তাদেরকে প্রশাসনে পুনর্বাসন করা হচ্ছে, তাদের নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ যখনই বিচ্যুতি দেখিয়েছে, সেই সংগঠনের ভেতর থেকেই তা সংশোধন হয়েছে। শেখ হাসিনা নিজে বারবার দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে নেতৃত্বে রদবদল করেছেন, বিচার করেছেন, শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু আজ যা হলো, তা কোনো সংগঠনগত শুদ্ধি নয়—এটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করার উদ্দেশ্য। এটা সেই “রিসেট বাটন”-এর আরেক ধাপ, যেটি ড. ইউনূসের মুখে শোনা গিয়েছিল।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা মানে ৭ মার্চের মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা, ১৯৭১-এর বাঙালির যুদ্ধকে অস্বীকার করা, ১৯৯০-এর সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনকে অমান্য করা। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়—এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা, ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত অপারেশন।

অন্তর্বর্তী সরকার আজ তার আসল মুখ দেখাল। তারা একদিকে জামাতের “রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা” গ্রহণ করছে, আর অন্যদিকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করছে। তারা একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের মামলাগুলো বন্ধ করছে, অন্যদিকে স্বাধীনতা পক্ষের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকছে। এটা একটা একতরফা যুদ্ধ, যেখানে নিশানা শুধু একটাই—শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব।

আমরা বলছি—ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিষিদ্ধ করা যায় না। ইতিহাস লিখে ফেলা যায় না নতুন করে। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও প্রান্তরের ছাত্রদের কণ্ঠ থেকে আবার সেই আওয়াজ উঠবে—ছাত্রলীগ মানেই বাংলাদেশ, ছাত্রলীগ মানেই প্রতিরোধ, ছাত্রলীগ মানেই স্বাধীনতা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

2 thoughts on “ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ—স্বাধীনতার পতাকাবাহী সংগঠনের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা আঘাত”

  1. Chatrolig nishiddo hoise, awamilig nishiddo oibo, tumra bara baroni nishiddo oibo. amar desh amar rules.

    Tumra awami sontrashider ei deshe jayga nai. tumrare jibonto kobor dimu aw desho.

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *