গণভবনকে জাদুঘর বানানোর নামে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপস্থিতি মুছে ফেলার অপচেষ্টা
আজ ২ নভেম্বর ২০২৪। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে আরেকটি ‘সাংস্কৃতিক অভিযান’ ঘোষণা করল—এইবার টার্গেট গণভবন। ঘোষণা এসেছে, গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য ১৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে এটি ইতিহাস সংরক্ষণের একটি সুন্দর উদ্যোগ, কিন্তু ভেতরে যেটি চলছে তা হলো—শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাঁর নেতৃত্ব, তাঁর শাসনকাল, এবং তাঁর প্রতীকী অবস্থানকে মুছে ফেলার ঠাণ্ডা মাথার অপারেশন।
গণভবন শুধুই একটি ভবন নয়। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা, গণতান্ত্রিক স্থায়িত্ব এবং নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনাই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে এই ভবনকে ব্যবহার করেছেন—না ক্ষমতা ভোগ করার জন্য, বরং রাষ্ট্র গঠনের নিরলস পরিশ্রমের কেন্দ্র হিসেবে। আজ সেই ভবনকে “জাদুঘর” বানানোর মানে, তাঁকে প্রতীকীভাবে অতীতে পাঠিয়ে দেওয়া—যেন তিনি আর ফিরে না আসেন, যেন তাঁর রাজনীতি হয়ে ওঠে কেবল অতীতের অংশ।
এই সিদ্ধান্ত কোনো সাংস্কৃতিক রুচির প্রকাশ নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ছক। একদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, অন্যদিকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাতীয় দিবস বাতিল—সবকিছু মিলিয়ে একটি ধারাবাহিক অপারেশন চলছে, যার লক্ষ্য আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ইতিহাস থেকে এক এক করে মুছে ফেলা। আজ গণভবন সেই মিশনের পরবর্তী অধ্যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—কে এই অধিকার দিয়েছে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে, যারা নিজেরাই অবৈধ? যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আসেনি, তারা কিভাবে একটি জাতীয় রাজনৈতিক প্রতীককে জাদুঘরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
শেখ হাসিনা এখনো বেঁচে আছেন, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াননি, বরং জাতির প্রয়োজনে আজও সক্রিয়। তাঁকে সরিয়ে তাঁর অফিস, তাঁর বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের নামেই আজ তাঁকে চিরতরে ‘অতীত’ বানানোর চেষ্টা। এটা কি স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, নাকি রাজনৈতিক প্রতিশোধের নতুন রূপ?
আমরা বলছি—এই সিদ্ধান্ত বন্ধ করতে হবে। গণভবনকে ইতিহাসে পাঠিয়ে দেওয়া মানেই জনগণের স্মৃতি ও শ্রদ্ধার অপমান। এই ভবন আজও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করে, এটি জাদুঘর নয়, এটি এখনও জীবন্ত ইতিহাসের অংশ। যেদিন তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেদিন তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী এই ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে—অন্তর্বর্তী সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তে নয়।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।