ইতিহাসের পূর্ণতা—আজ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলো, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির চূড়ান্ত পতন
আজ ১ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস লিখল। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির এবং সকল ফ্রন্ট সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সত্ত্বা হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এ নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী কার্যকর হয়, এবং বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—এই সংগঠনগুলো সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল।
এই পদক্ষেপ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক বিজয়। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে সরকার সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছে—বাংলাদেশে রাজাকারের রাজনীতি আর চলবে না।
গেজেটে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে, সরকার বিশ্বাস করে জামায়াত ও শিবির সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলার পেছনে ছিল।
এছাড়া গেজেটে উল্লেখ আছে—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিনটি রায়ে জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান শিবির) ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সাব্যস্ত করা হয়।
এছাড়া স্মরণ করা হয় ২০১৩ সালের ১ আগস্টের হাইকোর্ট রায়, যেখানে জামায়াতের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়, এবং পরে সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় বহাল রাখে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত ১৪ দলীয় জোটের ২৯ জুলাইয়ের বৈঠকের পরই অনুমিত ছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, “এই অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তারা শুধু ইতিহাসবিরোধী নয়, তারা রাষ্ট্রবিরোধীও।”
এই নিষেধাজ্ঞা এখন গেজেট আকারে কার্যকর হওয়ায় জামায়াত ও শিবির আর কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠন হিসেবে কাজ করতে পারবে না।
তারা থাকবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দ্বিতীয় সিডিউলে অন্তর্ভুক্ত একটি নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে।
আজকের এই সিদ্ধান্ত একটি জাতির শত বছরের রক্তস্নাত ইতিহাসের সঙ্গে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দিন।
১৯৭১ সালে যারা এই দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই শক্তি বারবার ছদ্মবেশে ফিরে আসার চেষ্টা করেছে—ছাত্র আন্দোলনের পেছনে লুকিয়ে, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে, শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যবহার করে রাষ্ট্রে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তাদের চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
এটি কেবল একটি দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা নয়, এটি একটি আদর্শ, একটি বিশ্বাস এবং একটি স্বাধীন জাতির পক্ষে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত।
যারা ২০২৪ সালে এসে এখনো ‘আলবদর’-এর উত্তরসূরিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের জন্য আজ একটি স্পষ্ট বার্তা—মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির জন্য বাংলাদেশে কোনো ঠাঁই নেই।
আমার মতে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি, স্বাধীনতাকে অর্জন করতে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের প্রতি জাতির প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়েছে।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হয়েছে মানে রাজাকারের রাজনীতি আজ বাংলাদেশের মাটিতে চিরতরে নিষিদ্ধ হলো।
আজকের এই সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের একটি পূর্ণতা—আর শেখ হাসিনাই তা বাস্তবায়ন করলেন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, অন্ধকারের ছায়াকে পেছনে ফেলে, আলো আর গণতন্ত্রের পথে।
আজকের দিন—বাংলাদেশের চেতনাকে মুক্ত করার দিন।