আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি—মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সরাসরি ঘোষণা করা

আজ ১৪ আগস্ট, বাংলাদেশে স্বাধীনতার ইতিহাসে এক নতুন আঘাত নেমে এসেছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ এবং এর ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ—ছাত্রলীগ ও যুবলীগ—নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি কোনো মতপ্রকাশ নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী উসকানি, একটি স্বাধীনতাবিরোধী এজেন্ডার ধারাবাহিক অংশ।

নুরুল হক নুর তার অতীত থেকেই পরিচিত একজন বিতর্কিত চরিত্র—একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি নির্লজ্জ অবজ্ঞা, অন্যদিকে মৌলবাদী ও উগ্র ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে অদৃশ্য আঁতাত। আজ তার এই বক্তব্য সেই ধারাবাহিকতাকেই চূড়ান্ত রূপ দিলো। তিনি দাবি করেছেন—“আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।” যে দল এই দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে, যাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীন ভূখণ্ড—সেই দলকে নিষিদ্ধ করতে চায় আজকের তথাকথিত “ছাত্রনেতা”?

আওয়ামী লীগ কোনো একদিনে তৈরি হওয়া দল নয়। এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দল, যার শিকড় এই দেশের প্রতিটি সংগ্রামে প্রোথিত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে বর্তমান উন্নয়নের অগ্রযাত্রা—আওয়ামী লীগই এই জাতির প্রাণশক্তি। আর সেই দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ তো ছিল জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম সারির যোদ্ধা। তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি মানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, তিরিশ লাখ শহীদ আর লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করা।

নুরুল হক নুর বলছেন—“আন্দোলনকারীদের হত্যার বিচার চাই।” কিন্তু প্রশ্ন হলো—কে এই আন্দোলনকারী? যাদের হাতে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুন লাগানো হয়েছে, পুলিশের উপর হামলা হয়েছে, জনগণের জীবনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে—তাদের কি কেউ জবাবদিহির বাইরে রাখতে পারে? নাকি বিচার হবে শুধু একপাক্ষিক অভিযোগের ভিত্তিতে?

এই দাবির পেছনে যে অন্তর্বর্তী সরকারের নীরব সমর্থন রয়েছে, তা আর আড়াল করার কিছু নেই। আজকের এই বক্তব্যকে সরকার প্রতিহত তো করেইনি, বরং নীরব সম্মতিতে আরও উসকে দিয়েছে। কারণ, এই সরকার জনগণের ভোটে আসেনি। তাদের ক্ষমতার ভিত্তি একটাই—আওয়ামী লীগকে হটিয়ে জামাত-বিএনপি ও একদল আত্মস্বার্থপর বুদ্ধিজীবীদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে—শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী সব শক্তিকে একে একে প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে। কখনও নিষিদ্ধ জামায়াতকে বৈঠকে ডাকছে, কখনও রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিকে উস্কে দিচ্ছে, আবার কখনও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি উন্মোচনে মদত দিচ্ছে।

আজ নুর যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বললেন, কাল তিনি কি বলবেন—মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভুল? পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে? এই পথই কি তৈরি করছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার?

আমরা বলতে চাই—এই জাতি ভুলে যাবে না কারা দেশের পক্ষে আর কারা দেশের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা মানে এই দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা মানে এই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রক্তস্নাত অধ্যায়গুলোকে অস্বীকার করা।

দেশবাসী আজ সজাগ। জাতি আজ বুঝে গেছে—এই সরকার, এই তথাকথিত আন্দোলনকারীরা আর তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সবাই এক জোট হয়ে দেশের ইতিহাস, গণতন্ত্র ও অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা বলছি—তা হতে দেব না।

আমরা বলছি—আওয়ামী লীগ এই দেশের হৃদস্পন্দন। শেখ হাসিনা এই দেশের নেতৃত্ব। এই জাতিকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। কেউই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে দিতে পারবে না।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *