অন্তর্বর্তী সরকারকে “দীর্ঘ মেয়াদে মেনে নেওয়া যাবে না”—বিএনপির মুখে এখন গণতন্ত্রের বুলি!
আজ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪। আর যাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি এক সময় ছিল সবচেয়ে অপ্রাসঙ্গিক, আজ তারাই বলছে—“জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘ সময় মেনে নেবে না।” এই মন্তব্য এসেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে। তিনি বলছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের নামে যদি এই সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকে, জনগণ তা মেনে নেবে না। শুনে জাতি বিস্ময়ে স্তব্ধ, কারণ এই অন্তর্বর্তী সরকার তো এই বিএনপি-জামাত চক্রেরই জন্মদান!
একটা সত্য বারবার উচ্চারণ করা দরকার—এই সরকার কোনো দৈব আকাশ থেকে আসেনি, কিংবা কোনো গণবিপ্লবের ফল নয়। এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিকল্পিত ছাত্র-আন্দোলনের ছায়ায়, যার নেতৃত্বে ছিল সেই সব মুখ যারা ’৭১-কে মানে না, ’৭২-এর সংবিধান বাতিল করতে চায়, এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকে মুছে ফেলতে চায়। এই আন্দোলনের পেছনে ছিল অর্থ, সংযোগ, ছায়া সরকার আর রাজনৈতিক আশীর্বাদ—যার মূল মদদদাতা ছিল বিএনপি ও জামাত।
যারা আজ বলছেন “এই সরকার মেনে নেওয়া যায় না,” তারা ক’দিন আগেই এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় নীরব সমর্থক ছিলেন। অন্তরালে থেকে তারা রাজনৈতিক সমঝোতার নামে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার রূপরেখা তৈরি করেছিল। আজ যখন দেখছে, এই সরকার শুধুই বিএনপির নয়, জামাত-বুদ্ধিজীবী-মধ্যপন্থীদের মিলিত থলি—তখন তারা নিজেদের “আলাদা অবস্থান” বোঝাতে মুখ খুলছে। এটা আসলে ছলনা, লোকদেখানো বিরাগ।
বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ড ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা কী করেছিল? আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল, সংখ্যালঘুদের ধর্ষণ করেছিল, হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করেছিল, আওয়ামী লীগকে “মাইনাস” করার জন্য নির্যাতনের সব পথ খুলে দিয়েছিল। তারা বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন—সবকিছু নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে তারা নিজেরা অংশ না নিয়ে দেশে আগুন দিয়েছে, পুলিশ হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সেই দলের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না।
এই অন্তর্বর্তী সরকারকে যারা জন্ম দিয়েছে, আজ তারা দেখছে এই সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে নিয়ে বিএনপিকেও ছিটকে দিতে পারে, তখনই তাদের মুখে “দীর্ঘ মেয়াদে মেনে নেওয়া যাবে না” জাতীয় বুলি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো—তারা জানে, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে যদি আবার গণতন্ত্রে ফিরে যেতে হয়, তাহলে ভোটের মাঠে তারা দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ আবারো সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। জনগণের ম্যান্ডেট বরাবরের মতো থাকবে শেখ হাসিনার পক্ষেই।
বিএনপি জানে, তারা ভোটে আওয়ামী লীগের সামনে টিকতে পারবে না বলেই এখন মামলার রাজনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনীতি, ইতিহাস বদলানোর রাজনীতি—সব একযোগে চালাচ্ছে। তারা চায়, আওয়ামী লীগকে এমনভাবে “মাইনাস” করা হোক, যেন আগামী নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে। তাদের এই পরিকল্পনার মূল শরিক জামাত-শিবির, এবং রাজনৈতিক কাঁধে ভর দেওয়া ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
আমরা বলছি—এই ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ বোঝে। জনগণ জানে, কে প্রকৃত গণতন্ত্রের ধারক, আর কে ভণ্ড রাজনীতির মুখোশধারী। আওয়ামী লীগ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, আছে, থাকবে। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, আছেন নেত্রী, থাকবেন জাতির আশার প্রতীক। মামলার কাগজে, হুমকির ভাষণে, বা ভণ্ড হুঁশিয়ারিতে আওয়ামী লীগকে মাইনাস করা যাবে না। ইতিহাসের হিসাব জনগণ একদিন ঠিকই বুঝিয়ে দেবে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।